ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অতীতের চেয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নত

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫
অতীতের চেয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নত

ঢাকা: অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নত অবস্থায় রয়েছে। উন্নয়ন, বাণিজ্য, সংস্কৃতিসহ দ্বিপাক্ষিক সবক্ষেত্রে সর্ম্পক এগিয়ে চলছে।

ভারতের ৬৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

শুক্রবার (২৩ জানুয়ারি) ভারতের ৬৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি ‘৬৬ ইন্ডিয়া রিপাবলিক ডে অ্যান্ড কনটেমপোরারি সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্গজ সরণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে ভার্দওয়াজ। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. (অব) আবদুর রশিদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান এবং ব্যারিস্টার তানিয়া আমির।

এছাড়া সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী এবং সদস্য সচিব সুবীর কুশারী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত শুধুমাত্র ভালো বন্ধু এবং প্রতিবেশী নয়। বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের উন্নয়ন অংশীদার। আমি এ বিষয়ে বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদীর নেতৃত্ব দক্ষিন এশিয়ার শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের মাধ্যমে অঞ্চলের জনসাধারণের জীবন মানের পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে মানসিক বন্ধন এবং মানুষে মানুষে যোগযোগ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি বড় মূল্যবান বিষয়।

ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্গজ সরণ বলেন, যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক উন্নত অবস্থায় রয়েছে। গত বছরের মে মাসে ভারতের নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুই দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দ্বিপাক্ষিক সফর করেছেন। এছাড়া দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বিভিন্ন ফোরামের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে সাইড লাইনে বৈঠক করেছেন। যা দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে। এছাড়া উপআঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় বাংলাদেশের মটরযান ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন করতে পারে বর্তমানে সে উপায় খোঁজা হচ্ছে। আগামী মার্চে এ বিষয়ে কলকাতায় চার দেশ বৈঠকে বসবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. (অব) আবদুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কিছু অভিন্ন স্বার্থে একত্রে কাজ করতে পারে। বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভারত একত্রে উন্নয়ন এবং সাম্প্রদায়িকতা দুটি বিষয় নিয়ে এগিয়ে চলছে। সাম্প্রদায়িকতা থেকে বর্তমানে উন্নয়নের চাকাটি সামনে এগিয়ে রয়েছে। তবে উন্নয়নের নীতি কাজ না করলে সাম্প্রদায়িকতা সামনে এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারত মধ্যে এক সময়ে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সম্পর্ক ছিলো। অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর করতে কেউ কাজ করেনি দেখেই তা ছিলো। যা দক্ষিণ এশিয়া প্রেক্ষাপটে বিশ্বের মধ্যে এ অঞ্চলের দেশগুলোর যোগাযোগ সবচেয়ে কম। এমনকি এ এলাকার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যও সবচেয়ে কম। ফলে এ অঞ্চলের জনসাধারণের উন্নয়নের স্বার্থে যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রয়োজন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে দুটি লাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা আরো ব্যাখ্যা করার পরামর্শ দেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমির।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এটিকে অন্যভাবে দেখার কিছু নেই। একটি বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল বাগানকে সুন্দর করে তোলে। ফলে আমাদের মধ্যকার ভিন্নতাকেও সুন্দর করেফুটিয়ে তোলা যায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে হবে। ভারতের এমন ধরনের নীতি নিতে হবে যাতে বাংলাদেশ ও ভারত একত্রে বড় হয়ে উঠতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশেরও ভারতের উত্তর-পূর্ব ল্যান্ড লক এলাকাতে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যবসা, বাণিজ্যের পাশাপাশি সমুদ্র বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ সপ্তম অঙ্গ রাজ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। যে অংশটি ভারতের সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। ফলে আমরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এ জন্য বাংলাদেশ-ভারতকে একত্রে কাজ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়া এখন আর শুধু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নতুন দক্ষিণ এশিয়া এখন একটি বড় ধারণা। বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশের ডায়াসপোরা দক্ষিণ এশিয়াকে পুরো বিশ্বে নিয়ে গেছে। যেমন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর অভিন্ন ভারতের কথা বলেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন আমি ভারতকে ভালোবাসি। তবে ভৌগলিকভাবে নয়, এর ধারণাকে। যে কারণে আমাদেরও ধারণার পরিবর্তন আনতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, নরেন্দ মোদী দক্ষিণ এশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু ইতিবাচক ধারণা দিয়েছেন। যা এ অঞ্চলের জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।