সিলেট: ওরা আগুন দিয়ে আমাদের দুই ভাইকে পুড়িয়ে দিলো। কী দোষ ছিল আমাদের।
পাশের বিছানায় চিকিৎসাধীন নিরঞ্জন সিংহ দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। মানুষ রূপী হায়েনাদের নারকীয় আগুনে পুড়ে মৃত্যুপথযাত্রী নিরঞ্জন।
শুক্রবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবরোধের নিষ্টুরতার এমন লোমহষর্ক চিত্র দেখা গেছে।
শ্বাসনালী পুড়ে নিরঞ্জনের জ্ঞান ফিরেনি। মুখ পুড়ে হয়েছে কালচে বর্ণের। চোখগুলোও ফুলে হয়ে ভোমরার মতো, শরীরের চামড়া ওঠে রক্ত ঝরছে তার।
অন্যদিকে, আল আমিনের (২৩) আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতাল অঙ্গন। তার সঙ্গে আগুনে পুড়েছেন আল আমিনের সহোদর হাসান আহমদ (২৫) পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন।
আল আমিনের মুখসহ শরীরের ২৫ ভাগ অংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তার ভাই হাসানের অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে।
বাংলানিউজকে আল আমিন বলেন, গাছের আড়াল থেকে আগুনের ফুলকি উড়ে আসতে দেখেছি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার মুখে আগুন লেগে যায়। দুই ভাইয়ের আর্তচিৎকারে লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে ছাতক লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে সিমেন্ট আনতে ট্রাক নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ভাই। রাত ১১ টার দিকে সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের লামাকাজি কাজিরব্রিজ এলাকায় পৌঁছামাত্র তাদের ট্রাকে পেট্টোল বোমা ছুঁড়ে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা।
পেশায় মেকানিক নিরঞ্জন সিংহ (২২)। কাজ করেন নিটল টাটা কোম্পানির সিলেট শাখায়। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ এলাকার বাবু সিংহের ছেলে নিরঞ্জনের পোড়াদেহ পড়ে আছে পাশের আরেকটি বিছানায়। জ্ঞান ফিরেনি নিরঞ্জনের। তাই স্বজনদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। কেউ করো সঙ্গে কথা বলছেন না। তাকে নিয়ে চিকিৎসকরাও হতাশ। জানিয়েছেন নিরঞ্জনকে ঢাকায় স্থানান্তর করতে হবে।
নিরঞ্জনের মুখমণ্ডল,শ্বাসনালীসহ শরীরের ৩০ ভাগ অংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হাসান আহমদ।
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে একটি ট্রাক মেরামতের পর চালকসহ পরিক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১১ টায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ওই ট্রাকে আগুন দেয় মানুষ্যরূপী হায়েনারা। চালকের স্টিয়ারিংয়ে থাকা নিরঞ্জন পেট্টোল বোমার আগুনে দগ্ধ হলে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সিএনজি অটোরিক্শাকে গুড়িয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান অটোরকশা চালক শাহজাহান মিয়া। আর দগ্ধ হয়ে এখন হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী নিরঞ্জন সিংহ।
একই রাতে অবরোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী কুমেদ দাশ (২৬) সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার আলীপুর গ্রামের মৃত মতিলালের ছেলে। আগুনে হাত ও শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক।
তবে অর্থের অভাবে তাদের চিকিৎসা কতদূর এগুবে এ নিয়ে স্বজনদের মধ্যেও রয়েছে সংশয়। তারা সকলে ওসমানী হাসপাতালের ৪র্থতলার ৫নং ওয়ার্ডে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) রাত ২ টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরের সারিঘাট থেকে বালুভর্তি ট্রাক নিয়ে ওসমানীনগর যাচ্ছিলো। পথে গোয়াইনঘাটেউপজেলার বাগের সড়ক এলাকায় অবরোধকারীরা ট্রাকের গতিরোধ করে পেট্টোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায় বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরে না আসায় সিলেট জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বার্ণ ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫