ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

২০১৬ সালে নৌবাহিনীতে সাবমেরিন

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫
২০১৬ সালে নৌবাহিনীতে সাবমেরিন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যুদ্ধজাহাজ ‘সমুদ্র জয়’ থেকে: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, চীনের সঙ্গে দুটি সাবমেরিন কেনার চুক্তি হয়েছে। সাবমেরিনগুলো গ্রহণ করতে নৌবাহিনীর প্রথম দল চীনে প্রশিক্ষণরত রয়েছে।

আমার বিশ্বাস আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে সাবমেরিনগুলো নৌবহরে যুক্ত হয়ে বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণ বাড়াবে, বাহিনী হবে ত্রিমাত্রিক।  

মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) গভীরসমুদ্রে নৌবাহিনীর বার্ষিক মহড়া শেষে যুদ্ধ জাহাজ ‘সমুদ্র জয়’ থেকে পোতাশ্রয়ে থাকা নাবিকদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে একথা বলেন রাষ্ট্রপতি।

বাহিনীর বার্ষিক মহড়া প্রত্যক্ষ করতে চট্টগ্রাম থেকে একটি স্পিডবোটে করে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার পর রাষ্ট্রপতি নৌবাহিনীর সবচেয়ে বৃহৎ যুদ্ধ জাহাজ ‘সমুদ্র জয়’-এ পৌঁছান।
 
জাহাজে এসে পৌঁছালে সমুদ্র জয়ের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন ডব্লিউ এইচ কুতুব উদ্দিন রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিএন ফ্লোটিলার কমডোর এম খালেদ ইকবাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
 
জাহাজে ওঠার পরপরই নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পতেঙ্গা মোহনা থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর বার্ষিক মহড়া ‘এক্সারসাইজ সি থান্ডার-২০১৫’ শুরু হয় দুপুর সোয়া ১২টায়। টানা ১৬ দিনব্যাপী মহড়ার পর মঙ্গলবার (২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এর চূড়ান্ত পর্ব। দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

আবদুল হামিদ বলেন, দেশ গড়ার কর্মকান্ড ছাড়াও সমুদ্রে চোরাচালান, অবৈধ মৎস্য আহরণ, জাটকা নিধন প্রতিরোধসহ উপকূল অঞ্চলে আশ্রয়ন ও বনায়ন এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা দুর্যোগে সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য।
 
তিনি বলেন, পটুয়াখালীতে নতুন নৌঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে, যা সাবমেরিন ও এভিয়েশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা যেকোনো সময়ের তুলনায় এই বাহিনীকে অধিকতর শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা আপনাদের কর্মতৎপরতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দিয়ে নৌবাহিনীকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাহিনীতে পরিণত করবে- এ আহ্বান জানাই।
 
দীর্ঘ ১৬ দিনব্যাপী এই বিশেষ সেমুদ্র মহড়ার উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ দেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি অভিভূত হয়েছি। আমি আজ নৌবাহিনীর অফিসার ও নাবিকদের মধ্যে যে পেশাদারিত্ব লক্ষ্য করেছি তা তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও কর্মস্পৃহা ও গভীর আত্মবিশ্বাস এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমেরই প্রতিফলন। সেজন্য আমি নৌবাহিনীর প্রধানসহ মহড়ায় অংশগ্রহনকারী সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত হওয়ার পরপরই ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর সমুদ্র জয়কে কমিশন করার সুযোগ হয়েছিল। আজ সেই জাহাজে করে নৌবাহিনীর সমুদ্র মহড়া অবলোকন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি।
 
আবদুল হামিদ বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে প্রায় চার দশকের সমুদ্র বিরোধের অবসান হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অনুযায়ী আমরা বঙ্গোপসাগরে সুবৃহৎ একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা এবং মহীসোপানে অর্থনৈতিক ও আইনগত অধিকার লাভ করেছি। এ জয়ের পেছনে মূল অনুপ্রেরণা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি স্বাধীণতার সূচনা লগ্নেই তার দূরদৃষ্টি দিয়ে অনুধাবন করেছিলেন সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭৪ সালে টেরিটোরিয়াল ওয়াটার অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছিলেন। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন করেছিলেন ৫টি সক্ষম রণতরী, যা ছিল সুসংগঠিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। সমুদ্র সীমা জয়ের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকায় আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদ যেমন: প্রাকৃতিক গ্যাস, মৎস্য ও জৈব সম্পদ রক্ষার গুরুদায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ওপরই ন্যস্ত। দেশের ৯৫ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমুদ্রপথে সম্পন্ন হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সি লাইনস অব কমিউকেশন রক্ষায় নৌবাহিনী সর্বদা থাকে সজাগ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি এ মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় আপনাদের কর্মপ্রয়াস জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
  
নৌবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশেষ করে লেবাননে এবং মালিতে নৌবাহিনীর জাহাজ ও বোটসমূহ প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। গেল ডিসেম্বরে বন্ধুপ্রতীম দেশ মালদ্বীপে সুপেয় পানির তীব্র সংকট হলে খুব স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘সমুদ্র জয়’ সেদেশে ১০০ টন বিশুদ্ধ পানি ও ৫টি লবনমুক্তকরণ যন্ত্র সরবরাহ করে দেশের জন্য ব্যাপক সুনাম বয়ে এনেছে।   বাংলাদেশ নৌবাহিনী পেশাগত কর্মদক্ষতার মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশের অর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ জাতীয় সমৃদ্ধির পথে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, সম্প্রতি খুলনা শিপইয়ার্ড হতে ৫টি পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ করা হয়েছে এবং দুটি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়াও দেশীয় প্রযুক্তিতে আনন্দ শিপইয়াডর্ডে একটি তেলবাহী জাহাজ এবং নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে দুটি ল্যান্ডিং ক্রাফট নির্মাণ করা হয়েছে। দেশে নির্মিত এ জাহাজসমূহ নৌবাহিনীর অপারেশনাল কর্মকান্ড এবং বার্ষিক মহড়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছে- যা জেনে আমি খুশি হয়েছি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন চলছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা ফ্রিগেট ‘সমুদ্র জয়’ ছাড়াও গণচীন হতে দুটি ফ্রিগেট বানৌজা ‘আবু বকর’ ও ‘আলী হায়দার’ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে। দুটি নতুন করভেট নির্মাণাধীন রয়েছে। পাশাপাশি নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে আধুনিক সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি দিয়ে সুসজ্জিত ও অধিক কর্মক্ষম করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। নৌবাহিনীতে দুটি উন্নতমানের মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট কিনে নেভাল এভিয়েশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নৌবাহিনীতে এক নতুনমাত্রা সংযোজিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌবাহিনীর নেভাল কমান্ডো দল সোয়াডস গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘন্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৫

** ‘সি থান্ডার’ দেখতে সমুদ্র জয়ে রাষ্ট্রপতি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।