ঢাকা, শনিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘পেট্রোল বোমাকে কোনো ছাড় নয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫
‘পেট্রোল বোমাকে কোনো ছাড় নয়’ ছবি: নাজমুল হাসান/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হোটেল লেকশোর থেকে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ’র (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেছেন, পেট্রোল বোমাকে কোনো ছাড় নয়, সন্ত্রাসকে কোনো ছাড় নয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ এ ধরনের খারাপ অবস্থার মধ্যে কখনো পড়েনি।

যারা এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে তাদেরকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, বিশ্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তখন তারা স্পষ্টই বলেছিল, হয় আপনি সন্ত্রাসের পক্ষে থাকবেন, নতুবা আমার পক্ষে থাকবেন। এর বাইরে কোনো অবস্থান নেই। আজ বাংলাদেশের অবস্থাও সে রকম হয়েছে। সন্ত্রাসের পক্ষ শক্তি আর বিরোধী শক্তি। মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই।   

রোববার (০১ জানুয়ারি) ‘সহিংস রাজনীতি অবরুদ্ধ দেশ: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন। হোটেল লেকশোরে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে রিজিওনাল টেরোরিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (রাত্রি)।

রাত্রির নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সিকদারের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক জিনাত হুদা।

সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, কারণ দু’পক্ষেই জনসমর্থন রয়েছে। যদিও সন্ত্রাসী কাজ হচ্ছে, কিন্তু এর পেছনে রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে। এদের নির্মূল করতে হলে ওই সব জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে হবে। তবে এটি সমাধান নয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে এগুতে হবে। শান্তিপূর্ণ পথে মানুষ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ না করতে পারলে সহিংস পথে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, আমরা সংলাপ চাই। তবে তার আগে পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস বন্ধ চাই। সন্ত্রাসের কাছে মাথা নোয়াতে জানে না এদেশের জনগণ।

তিনি বলেন, যারা ১৫ লাখ ছেলেমেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়। চিত্ত শুদ্ধ হয়ে আসুন, তাহলে আলোচনা হবে। ৫ কোটি ছেলেমেয়ে স্কুলে যায়, ৩০ লাখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। এদের পথ রুদ্ধ করতেই এই সন্ত্রাস।

বৈঠকে সমকাল সম্পাদক গোলাম সরওয়ার বলেন, রাজনীতি যদি হয় শিক্ষা ধ্বংস করা, তাহলে সেই রাজনীতির দরকার নেই। একে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। আপনার কাছে অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু আপনি সংলাপকে না করেছেন, নির্বাচনকে না করেছেন। সর্বশেষ দরজা বন্ধ করেছেন। সব প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন। অথচ দরজা বন্ধ রেখে সেই পথ বন্ধ করেছেন।

‘বন্ধ করুন এ নৃশংসতা, বন্ধ করুন মানুষ মারার রাজনীতি’, বলেন সমকাল সম্পাদক।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, পেট্রোল বোমায় পোড়া একজন ট্রাকচালক রাজনীতিবিদদের চেনেন না। বিএনপি যদি পেট্রোল বোমার রাজনীতি না করে, তাহলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিক। মানুষকে পুড়িয়ে মারা রাজনীতি নয়। দেশের রাজনীতি, শিক্ষা, উৎপাদন খাত আজ বার্ন ইউনিটে পুড়ছে। সরকারেরও দায়দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই।

বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান বলেন, যে দেশে ৯৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করে, সেখানে পরীক্ষা না নেওয়াই ভালো।

তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি এক মাসের সফল আন্দোলন করে পুরো জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। একমাস ধরে বিএনপি দেখিয়েছে, কিভাবে আন্দোলন করতে হয়।    

আখতারুজ্জামান বলেন, সারারাত পুলিশি বাণিজ্য চলছে। গ্রামের মানুষ পুলিশের অত্যাচারে ঘুমাতে পারেন না। যে দেশে ৯৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করে, সেখানে পরীক্ষা না নেওয়াই ভালো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, জনগণের সঙ্গে সংলাপ হতে হবে। কিন্তু বিএনপি নেত্রী সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, উদীয়মান জাতির অর্জনকে ধুলিস্যাৎ করতে কারা এগুলো করছে? তারা সমাজকে দুর্বল অবস্থানে নিয়ে যেতে চাইছে।

তিনি বলেন, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের নামে তারা কার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে? এরা কখনোই দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারেনি। বিরোধী দল হিসেবেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। তারা শুধু ক্ষমতায় যেতে চায়। দেশ ও জনগণের জন্য কোনো ধরনের কর্মসূচি দিতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দল কি শুধুই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য? তারা জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাইছে অথচ, তাদের (জনগণ) জন্য কখনো কাজ করছে না। যারা মানুষের জন্য রাজনীতি করে না, তাদের বর্জন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫

** দু’পক্ষের জনসমর্থনেই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে
** চিত্ত শুদ্ধ হয়ে আসলেই সংলাপ
** দেশ আজ বার্ন ইউনিটে পুড়ছে
** ‘পরীক্ষা না নেওয়াই ভালো’
** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়
** মানুষের জন্য যারা রাজনীতি করে না তাদের বর্জন করুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।