ঢাকা, রবিবার, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পার্বতীপুরে তীর বিদ্ধ হয়ে যুবক নিহতের ঘটনায় মামলা

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫
পার্বতীপুরে তীর বিদ্ধ হয়ে যুবক নিহতের ঘটনায় মামলা

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে জমি নিয়ে সংঘর্ষে তীর বিদ্ধ হয়ে যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনসহ ৪৮ জন আদিবাসী সাঁওতালকে আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে, নিহত যুবক শাফিকুল ইসলাম সোহাগের ময়নাতদন্ত শেষে রোববার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পার্বতীপুর উপজেলার অসুলকোট শালাইপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।



পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, নিহত শাফিকুলের চাচা মাহমুদুল হক বাদী হয়ে শনিবার গভীররাতে ২৮ জন আদিবাসী সাঁওতালের নাম দিয়ে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

এর মধ্যে শনিবার (২৪ জানুয়ারি) ঘটনাস্থল থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার দুপুর ১২টার দিকে দিনাজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয় বলে তিনি জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বার্নাবাস টুডু (৪০), হাবিল টুডু (৫৫), এন্টানুস টুডু জিঠু (২২), এমেলুইস চুনু (২০), জীবন হেমরন রুবেন (২২), খলিল টুডু রিপন (২৫), লাজারুস টুডু নাসের (২০), জুয়েল টুডু (২২), ফাবিয়ান মার্ডি (২০), নরেন মার্ডি (৫০), মশাই টুডু (৫৮), চেলসু হেমরন রেন্টা (৪৫), রেনাতুর হেমরম (৪০), রাকিব মুর্মূ (৩২), রমেশ সরেন মুখু (৫০), আলফন কিউস টুডু পতয় (৪০), কারলুস টুডু (৩০), বাচ্চু বর্মন (৩৮) ও হাইরুস টুডু ঠসা (৪২)।

ওসি বলেন, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থানায় কেউ মামলা দিতে আসেনি।

এদিকে, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ (দিমেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত শাফিকুল ইসলাম সোহাগের (২১) মরদেহ রোববার সকালে উপজেলার অসুলকোট শালাইপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে বেলা ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ফের সংঘর্ষ হতে পারে এমন আশঙ্কায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে ২০ সদস্যের একটি দল সার্বক্ষণিক মোতায়েন রাখা হয়েছে।

পার্বতীপুর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের হবিবপুর চিড়াকুটা সাঁওতাল পল্লীর মোসেফ টুডু, বার্নাবাস টুডু, হাবিল টুডু, যোশেফ টুডু সহ ২০/২৫টি সাঁওতাল পরিবারের সঙ্গে প্রায় ২০ একর জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী অসুলকোট শালাইপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম গংদের দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল।

শনিবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে জহুরুল ইসলাম ও তার ছেলে সোহাগ বিরোধপূর্ণ জমিতে ইরি-বোরো রোপণের জন্য শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে গেলে মোসেফ টুডু ও যোশেফ টুডুর নেতৃত্বে একদল সাঁওতাল তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন সাঁওতাল তীর ধনু নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করে। সাঁওতালদের ছোঁড়া তিনটি তীর সোহাগের বুকে, পিঠে ও হাতে বিদ্ধ হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এসময় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা জহুরুল হক গুরুত্বর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল (দিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, সোহাগ নিহত হওয়ার বিষয়টি দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অসুলকোট শালাইপুর ও লালমাটি গ্রামের কয়েকশ’ বিক্ষুদ্ধ লোক হবিবপুর চিড়াকুটা গ্রামে সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে কয়েকটি বাড়ির ঘরের চালায় আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে মোসেফ টুডু, বান্না টুডু, জোসেফ টুডু, হাইরুস টুডু ঠসাসহ সাতটি বাড়ির ঘরের চালা পুড়ে যায়।

এছাড়া অন্ততঃ ৩০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ ধান, চাল, শেলাই মেশিন, শ্যালো মেশিন, মোটরসাইকেল, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ থালা, বাসন, টিউবওয়েল এবং গরু লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে দিনাজপুর, পার্বতীপুর মডেল থানা ও ফুলবাড়ী থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি এসে দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১৯ জনকে আটক করে।

পরে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শামিম আল রাজি, পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেনুল ইসলাম, পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয় এবং রাতেই প্রত্যেক সাঁওতাল পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল ও প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।