ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আজহারের আপিল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫
আজহারের আপিল এটিএম আজহারুল ইসলাম

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।

বুধবার (২৮ জানুয়ারি) ১১৩ যুক্তিতে আজহারকে নির্দোষ দাবি করে ফাঁসির রায় বাতিল ও খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা।

আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০  পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ২৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করেন তারা। আপিল মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন তুহিন।

বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে আজহারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক আটকে রাখা, নির্যাতন ও লুটপাটের পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর এই কমান্ডারের মামলার রায়ে তাকে সর্বোচ্চ এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শত শত বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩(২)/এ, ৩(২)/সি, ৩(২)/ডি, ৩(২)/জি ও ৩(২)/এইচ এবং ৪/১ ও ৪/২ ধারা অনুসারে এসব অভিযোগ গঠন করা হয়।

এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির(উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়েছে রায়ে।

রায়ে ২ নম্বর (ধাপপাড়া গণহত্যা), ৩ নম্বর (ঝাড়ুয়ারবিল গণহত্যা) এবং ৪ নম্বর (রংপুর কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পত্মীকে হত্যা) অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পেয়েছেন আজহার। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে এক নারীকে ধর্ষণ ও পাকিস্তানি সেনাদের ধর্ষণে সহায়তার দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরসহ আরও ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে তাকে।

তবে ১ নম্বর অভিযোগ (মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও রংপুর শহরের বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে গণহত্যা) প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

আজহারের বিরুদ্ধে রায়ে বলা হয়েছে, রংপুরের কারমাইকেল কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে আজহার জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর শাখার সভাপতি ও ওই জেলার আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যাতায়াতের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। আসামি আজহার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজন, মুক্তিকামী বাঙালি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে দিতেন এবং তাদের হত্যা, গণহত্যা, আটক ও নির্যাতনে পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র করে তা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও তা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে এসব অপরাধ সংঘটন করেন এটিএম আজহার। তাই মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদরের নেতৃত্বে থাকায় তার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির  (উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে রায়ে।

এছাড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আজহারের নির্যাতনের শিকার একজন বীরাঙ্গনাকে পুনর্বাসন করতে রাষ্ট্রকে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের আত্মত্যাগ তুলে ধরতে পাঠ্যপুস্তকে বীরাঙ্গনাদের বিষয়টি তুলে ধরতে বলা হয়।

ওই বীরাঙ্গনাকে ক্ষতিপূরণ দিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন প্রসিকিউশন। আজহারের বিরুদ্ধে ওই বীরাঙ্গনা রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী হিসেবে ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর টাউন হলে স্থাপিত পাকিস্তানি ও রাজাকার ক্যাম্পে আজহারের নেতৃত্বে ধর্ষণ ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।