জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সংসদে বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বেপরোয়া বা অদক্ষ গাড়ি চালকের কারণেই শুধু দুর্ঘটনা ঘটে তাই নয়।
বুধবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালী বিধি-৭১ বিধি অনুসারে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও সড়ক দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এর জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের ‘ল’ মেকাররা অনেক সময় ‘ল’ ব্রেকার হয়ে যায়। এখন নীলক্ষেতে জাতীয় সংসদের স্টিকার পাওয়া যায়, জাতীয় সংসদের স্টিকার লাগিয়ে বাসার কাজের লোকরাও অনেক সময় বাজার করতে যায়। আমরা অসাধারণ মানুষ অনেক সময় রাস্তার শৃঙ্খলা মানি না। কিন্তু সাধারণ মানুষ শৃঙ্খলা মানেন। অনেক সময় ভিআইপরাও রাস্তা পারাপার করেন রং সাইড দিয়ে।
তিনি বলেন, আমরা যেন ‘ল’ ব্রেকার না হই, মেকার হই। আমরা যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলি। পুলিশ ভিআইপিদের কিভাবে বাধা দিবে? ভিআইপিরা অনেকেই সিগনাল মানেন না এতে ট্রাফিক পুলিশকে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের সকলেরই উচিত আইন মেনে চলা।
‘আবার শস্যের মধ্যে তো ভূত আছেই’, বিআরটিএ’র পূর্বের অনিয়মের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এক সময় বিআরটিএ ছিলো অনিয়ম আর দুর্নীতির প্রতিষ্ঠান। আমরা এ সংস্থার ৫০ শতাংশ দুর্নীতি কমিয়েছি। এসব সমস্যা সমাধানের সম্মিলিত পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শুধু সড়ক জনপথ বা সেতু বিভাগের এ দায়িত্ব না। স্থানীয় সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব আছে।
তিনি আরও বলেন, একসময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার মরণ ফাঁদ ছিলো। আমরা কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে সেখানে দুর্ঘটনা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। দুর্ঘটনা-যানজট দূর করতে সন্মলিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে গেলে এসব সমস্যা অনেক কমে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, হাইওয়েগুলোতে নসিমন করিমন চলাচল করে। এগুলো দুর্ঘটনার বড় কারণ। এ ধরনের অ-অনুমোদিত যানবাহনকে চলাচলে উৎসাহিত করবেন না।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ডিভাইডার দিয়ে রাস্তা করছি। উনি (রহমউল্লাহ) পুরনো গাড়ি তুলে নেওয়ার কথা বলছেন। আমরা পুরনো গাড়ি তুলে নিবো কিন্তু যখন গাড়ি আগুনে পুড়ছে ভাঙচুর হচ্ছে, তখন মালিকরা নতুন গাড়ি আর নামাতে চায় না। আমরা যদি এ কাজে নামি তখন দেখা যাবে সব গাড়ি চলে যাবে, তখন মানুষ যানবাহন পাবে না, চলাচলে দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। এ পর্যন্ত আমরা ৪৩৫টি ফিটনেসহীন গাড়ি ডাম্পিং করেছি। খালি ডাম্পিং করলেই হবে না, নতুন গাড়িও আনতে হবে। আপনি ১০০টি নতুন গাড়ি আনুন। আমরা ১০০ পুরনো গাড়ি তুলে নেবো।
এ কে এম রহমতউল্লাহ তার নোটিশে উল্লেখ করেন, বিআরটিএ’র নিবন্ধিত গাড়ির লাইসেন্সের বেশির বাড়ই জাল। দেশে ২০ ধরনের ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৪৪৪টি গাড়ির নিবন্ধন আছে। এরমধ্যে মাত্র ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৭৮টি গাড়ির চালকের লাইসেন্স আছে। বাকি ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৬টি গাড়ি চলছে অবৈধ লাইসেন্সে। অনিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যাও অর্ধ লাখ। প্রায় ২০ লাখ মোটর চালিত গাড়ির মধ্যে অর্ধেকের বেশি মোটর সাইকেল, এসব মোটর সাইকেলের শতকরা ৭০ ভাগের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই। আর রাস্তায় চলাচলকারী সাড়ে ৫ লাখ লাইসেন্সবিহীন গাড়ির জন্য ১৬ লাখ চালক অবৈধ বা জাল লাইসেন্স ব্যবহার করে গাড়ি চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৫