ঢাকা, সোমবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘জাত সুইপার হইয়াও কাজ পাই না’

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫
‘জাত সুইপার হইয়াও কাজ পাই না’ সুইপার কলোনীর খণ্ডচিত্র /ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘জাত সুইপার হইয়াও আমরা কোনো কাজ পাই না। বেকার হইয়া পড়ে আছি।

কিন্তু আমাগো পরিবর্তে অন্যেরা কাজ করে। আর আমরা অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন-যাপন করছি। ’

ভারাক্রান্ত মনে কথাগুলো বাংলানিউজের এ প্রতিবেদককে বলছিলেন রাজধানীর দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনীর (কানপুরী) সিটি দলিত শ্রেণি সম্প্রদায়ের একজন গোপাল দাস।
 
গোপাল মেরিন ডিজাইন টেকনোলজিতে একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তবে বর্তমানে কাজ না থানায় বেকার হয়ে পড়েছেন।
 
তিনি বলেন, ‘ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করাই আমাদের কর্ম, আমরা কাজ জানি কিন্তু আমাগো দাম নাই। ’    
 
রাজধানীর দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনীতে (কানপুরী) প্রায় দেড়শ পরিবাবের বসবাস। এই কলনীতে অনেকটা আঁটসাট ভাবেই বসবাস করছে প্রতিটি পরিবার। সন্তানদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও নেই চাকরি।
 
সরকারি-বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ৮০ ভাগ কোটা বরাদ্দ থাকলেও আমাদের কপালে ঝুটছে না কোনো চাকরি যোগ করেন গোপাল দাস।
 
এ প্রসঙ্গে কলোনীর বাসিন্দা রাজন সামুন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা খেতে না পেলেও শিক্ষার প্রতি আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। সরকারি চাকরির জন্য বার বার আবেদন করলেও কোনো লাভ হয় না। ইন্টারভিউ’র জন্য আমাদের ডাক‍া হয় না। কেন ডাকা হয় না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা দলিত জনগোষ্ঠী বলে।
 
রাজন বলেন, এখনো আমরা আশায় আছি, আমাদের ন্যায্য অধিকার পাবো। সরকার আমাদের ন্যায্য অধিকার দেবেন। আমরা চাকরি পাবো। কাজ করে খেতে পারবো।
 
তিনি বলেন, জীবিকার জন্য চাই চাকরি, এবং মাথাগুজার জন্য চাই আবাসন ব্যবস্থা।
 
কলোনীর সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধার জন্য ওয়ারী সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ নামে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংগঠন রয়েছে তাদের।   সংগঠনের সভাপতি সাধু লাল এবং সাধারণ সম্পাদক সুমন সামুন।
 
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি সাধু লাল বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কাজগুলো আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেই। কোনো সমস্যা হলে এই সংগঠনের মাধ্যমেই তা সমাধান করে থাকি।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন আমাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। দিলেই বা কি আমাদের এখানে অধিকাংশই বেকার জীবন পার করছেন। তাদের কোনো কাজ নেই। সিটি করপোরেশনের যে কাজ পাই এতে সবার হয়নি। অনেকে এই কাজ ভাগে পান না।
 
সিটি করপোরেশনই আমাদের পিতা-মাতা। কারণ আমরা সকল সুযোগ-সুবিধা পাই সিটিকরপোরেশনের কাছ থেকেই। সিটি করপোরেশন আমাদের আবাসন ব্যবস্থা করেছে। কলোনীতে ইট দিয়ে ঘর বানানোর কাজ চলছে।
 
সমাজের সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে কলোনীর নিপু দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, আগে সমাজের মানুষ আমাদের সঙ্গে মিশতো না। তবে এখন আমরা পর্যায়ক্রমে এই প্রতিবন্ধকতা কাটাতেও স্বক্ষম হচ্ছি।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনীতে দলিত শ্রেণি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের অনুমতি পেয়েছে নাভানা কনষ্ট্রাকশন।   
 
                                                            সুইপার কলোনীর খণ্ডচিত্র
নাভানা কনষ্ট্রাকশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,দলিত জনগোষ্ঠীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এখানে ১০তলা বিশিষ্ট ৫টি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতি ভবনে ৯২টি করে মোট ৪৬০টি ইউনিট হবে।
 
প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।

কলোনীর যারা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা তাদের নিজের ছবি ছাপাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।