ঢাকা: দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের হামলায় গত এক সপ্তাহে চার বাংলাদেশিসহ কমপক্ষে ১৪জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক‘শ মানুষ।
এছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে শত শত দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
দেশটির রাজধানী জোহানেসবার্গের সোয়েটো নগরীতে কৃষ্ণাঙ্গরা বিদেশি নাগরিকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ কেউ এসব হামলার খবর ও ছবি পোস্ট করছেন।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ দূতাবাস গত সপ্তাহে তিন জন বাংলাদেশির নিহত হয়েছে বলে খবর নিশ্চিত করেছে।
আর গত কয়েক সপ্তাহে মোট ১২জন বাংলাদেশি সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন হামলায় নিহত হয়েছেন বলেও জানায় দূতাবাস।
হাসান কবির নামে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশি বাংলানিউজকে জানান, এ পর্যন্ত চার জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে বুধবার রাতে একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতরা হচ্ছেন- ফেনীর দাগনভূঞার গজারিয়া এলাকার দিদারুল আলম, জামালপুরের লুৎফর রহমান, মো. আকতারুজ্জামান (ঠিকানা জানা যায়নি)।
হামলার সবশেষ বলি হয়েছেন পুমালাঙ্গার নেইলস্ট্রিটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জুম্মান আলী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির দিথপুর এলাকায়। বুধবার রাতে তাকে হত্যা করা হয়।
আহতদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন বলেও জানান প্রবাসী হাসান কবির।
তিনি জানান, গত ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ নিহত হলে ওই ঘটনার জন্য বিদেশিদের দায়ী করে এসব হামলা ও লুটপাট শুরু হয়।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা জানান, হামলাসহ লুটপাটের ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
এ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ দূতাবাস উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযাগ করেন প্রবাসী হাসান কবির।
তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশিরা এই ঘটনার পর সোয়েটো পুলিশ সুপারকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেখানে রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি উপস্থিত হননি।
‘দূতাবাসের সঙ্গে বিপদগ্রস্ত প্রবাসীরা যোগাযোগ করলেও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি দূতাবাস’—যোগ করেন হাসান কবির।
যোগাযোগ করা হলে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার দাউদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, গত সপ্তাহে তিন জন বাংলাদেশি কৃষ্ণাঙ্গদের হাতে নিহত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। তবে কেন বা কী কারণে খুন হয়েছেন- তা এখনও জানা যায়নি।
প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
দাউদ আলী বলেন, দেশটির বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাংলাদেশিদের দোকানপাট আছে। এসব অঞ্চল বেশ অরক্ষিত। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশও নিয়মিত টহল দেয় না। ওইসব এলাকায় প্রায়ই কৃষ্ণাঙ্গরা ডাকাতি করে। ডাকাতদের প্রতিহত করতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশিও প্রাণ হারান।
দূতাবাসের প্রথম সচিব শাহ আলম খোকন বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১২ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন।
এরমধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি রমজান, ফয়সাল ও রহমতউল্লাহ ২০ জানুয়ারি মনিরুল ইসলাম, ২২ জানুয়ারি মোহাম্মদ হোসেন, ২৩ জানুয়ারি ইকরাম উদ্দিন, ২৬ জানুয়ারি বেলায়েত হোসেন নামের বাংলাদেশি নিহত হন।
তিনি জানান, এদের কেউ কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে অর্ধেক সংখ্যাই বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী হামলায় বা কৃষ্ণাঙ্গদের হাতে নিহত হয়েছেন।
নিহত ১২ জনেরই লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানান শাহ আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫, আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা