ঢাকা: আকস্মিক বন্যার সাতদিন আগেই হাওর এলাকায় বসবাসকারী কৃষকদের কাছে আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছে দেবে Climate Adaptation and Livelihood Protection (CALIP) প্রকল্প।
এতে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সতর্কবার্তা তৈরিতে কাজ করবে আবহাওয়া অফিস, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশবিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট এবং ফ্লাড ফোরকাস্টিং অ্যান্ড ওয়ার্নিং সেন্টার।
বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং কৌশল নির্ধারণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালাটি উদ্বোধন করেন- এলজিইডির সিনিয়র সেক্রেটারি মনজুর হোসেন।
বক্তব্য রাখেন- এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শ্যামাপ্রসাদ অধিকারী এবং ইফাদ কান্ট্রি পোগ্রাম অফিসার নিকোলাস সাইদ।
কর্মশালায় অংশ নেন দেশি ও বিদেশি জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হাওরবাসীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি তাদের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল-ইফাদের আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এটি ইফাদের হাওর অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়নে (Haor Infrastructure and Livelihoods Improvement Project ) প্রকল্পটির সম্পূরক হিসেবে হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক দরিদ্র জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
মনজুর হোসেন বলেন, এই CALIP প্রকল্পে জলবায়ু পরির্তনের ঝুঁকি কমিয়ে হাওরে দরিদ্র মানুষদের জীবিকার সুযোগ করে দিতে একাধিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকছে। এই প্রকল্প গ্রামরক্ষায় বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষ-নিরীক্ষা করেছে। কাজেই এটি লক্ষ্য বাস্তবায়নে সফল হবে।
তিনি বলেন, সরকার আশাবাদী। প্রকল্পের সাফল্য অন্যান্য দাতাসংস্থাকে জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব ও তা মোকাবেলায় আরো গবেষণা ও উদ্ভাবনী কর্মসূচি গ্রহণে উৎসাহী করবে।
CALIP-এর আওতায় আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া ছাড়াও নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এই পাঁচ হাওর জেলায়, জলবায়ু পরিবর্তন সহনে সক্ষম পাঁচটি মডেল গ্রাম গড়ে তোলা হবে।
২২৪টি গ্রামরক্ষায় কার্যক্রম নেওয়া হবে। ৫০টি বিল উন্নয়নের মাধ্যমে দরিদ্রের কর্মসংস্থান, ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা, হিজল-করল বৃক্ষের মাধ্যমে বনায়ন, বন্যা সহনীয় রাস্তা নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে।
প্রকল্পের সুবিধা উল্লেখ করে মনজুর হোসেন বলেন, পাশাপাশি এটি কৃষকদের কাছে ক্লাইমেট স্মার্ট (জলবায়ু সহায়ক) প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জীবনের টেকসই উন্নয়নে কাজ করবে। প্রায় ১১৭ কোটি টাকার এই সম্পূরক প্রকল্পের আওতায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এ ছাড়া সরাসরি উপকৃত হবে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার পরিবার।
ইফাদ ওয়াকিবহাল হাওর এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে জীবিকা নির্বাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ইফাদ কান্ট্রি পোগ্রাম ম্যানেজার নিকোলাস সাইদ বলেন, সংস্থাটি (ইফাদ) এই এলাকার জন্য পরিবার এবং কমিউনিটি পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয়, উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম নিতে চায়। তারই ফলশ্রুতি এই প্রকল্প। এটি আকস্মিক বন্যা, প্লাবন, ভূমিক্ষয় এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে হাওরবাসীকে টেকসই জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।
কর্মশালায় হাওর এলাকায় জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব তুলে ধরেন সেন্টার ফর গ্লোবাল চেঞ্জ-এর কার্যনির্বাহী পরিচালক ড. আহসান উদ্দিন আহমেদ।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের টেকনিকাল উপদেষ্টা জেনে মেন্ডলা দ্য সুরে (Janot Mendler de Suarez) আগাম সতর্কবার্তার নানা দিক আলোচনা করেন।
ইফাদের আঞ্চলিক পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ রোসান কুক (Roshan Cooke) আগাম সতর্কবার্তার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন।
ইফাদ বাংলাদেশে ১৯৭৬ সাল থেকে কাজ করছে এবং এ পর্যন্ত ৩০টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৬৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে সরাসরি উপকৃত হয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫