ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পথের শিশু

‘বড় মিষ্টি খামু’

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫
‘বড় মিষ্টি খামু’ ছবি : ঊর্মি মাহবুব/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শরীফ। বয়স আনুমানিক সাত বছর।

জরাজীর্ণ পোশাক। শরীরের বিভিন্ন অংশে খোশ-পাচরা। রাস্তাই বাড়ি, রাস্তাই জীবন। জীবনের শক্ত শক্ত কথা বোঝে না শরীফ। জীবনে কী করতে মন চায় শরীফের! সহজ উত্তর, মিষ্টি খাইতে মুঞ্চায়।

পথশিশু দিবস আসে যায়, কিন্তু শরীফদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।

শরীফ বলে, ‘সহালে ঘুম থেইকা উডি। হের পরে বাজানে ফুল আইনা দেয়। হারা দিন হাডি আর ফুল বেচি। দোহানে খালি মিষ্টি দেহি। কিন্তু খামু ক্যামনে?  ট্যাকা লাগেতো। বাজান ট্যাকা দেয় না’।  

ছোট্ট শরীফের বোঝার উপায় নেই যে, চাইলেই বাবা শরীফকে মিষ্টি কিনে খাওয়ানোর সামর্থ্য রাখেন না।

ফার্মগেট-শাহবাগ এলাকায় ফুটপাতে হেঁটে গোলাপ বিক্রি করে শরীফ। তার ফুলে মনোরঞ্জন হয় রাজধানীবাসীর, কিন্তু পেটের ভাত জোটে না নিজের। মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে  যায়, কেবল তাকিয়ে থাকে। খুব বেশি হলে ঢোক গিলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে এই ছোট্ট শিশুর।

কোন মিষ্টি খাবে জানতে চাইলে শরীফ বলে, ‘বড় মিষ্টি খামু’।

এই পথশিশুদের চাওয়া খুব সামান্য, তবে পাওয়ার খাতায় যেন কেবলই থাকে শূন্য। মিষ্টি খেতে খেতে বলে, ‘আফা কতো দিন পর মিষ্টি খাইলাম’।

শরীফের বয়স যখন মায়ের কোলে থাকার তখন মা শাহীনুর সুখের হাতাছানিতে অন্য কারো হাত ধরে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য কোনো ঠিকানায়। ময়মনসিংহের শহর ছেড়ে বাবা শহীদ একমাত্র ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। না আছে শিক্ষাগত যোগ্যতা না আছে টাকা-পয়সা। ছেলেকে নিয়ে শহীদের আশ্রয় জোটে রাজধানীর পথঘাটে। নিজে বিক্রি শুরু করেন পাপড়। উপায়ান্তর না দেখে অর্থ উপার্জনে নামতে হয় ছোট্ট শরীফকেও।

সমাজের সামার্থ্যবান মানুষরা এসব শিশুর পাশে না দাঁড়ালেও ছোট পরিসর হলেও এগিয়ে এসেছেন ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের বেশ কিছু শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, আজীমপুর ও পরিবাগ এলাকায় পথশিশুদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছেন। এমনই একজন বারডেমের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্বাস ভূঁইয়া।

আব্বাস ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিদিন পড়ালেখার পাশাপাশি পরীবাগের রাস্তার পাশে পথশিশুদের পড়াই। এদের প্রতি আমরা দায়িত্ব এড়াতে পারি না। তবে আমাদের তেমন কোনা সসামর্থ্য নেই। তাই বস্তি ও রাস্তা থেকে শিশুদের নিয়ে এসে এখানে পড়ালেখার ব্যবস্থা করি।

পথশিশু দিবস ঘটা করে উদযাপন করা হলেও শরীফরা থেকে যায় নিজেদের মতোই।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।