ঢাকা, সোমবার, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মিরপুরে কারখানায় আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
মিরপুরে কারখানায় আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ ছবি : জিএম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর ১-এ নাসিম প্লাজার পাশে একটি প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, দগ্ধ ও আহত হয়েছেন বেশ ক’জন।



শনিবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে অ্যাপকো বাংলাদেশ লিমিটেড নামে ওই প্লাস্টিক পণ্য তৈরির চারতলা বিশিষ্ট কারখানার নিচতলায় বয়লার বিস্ফোরণে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিটের প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ ঘটনায় চারজনের পরিচয় সনাক্ত হওয়া গেছে। এরমধ্যে- রাশিয়া বেগম (৩৫)। তার বড় ভাই আলি আহমেদ লাশটি সনাক্ত করেন। রাশিয়া বেগম ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় পিওন পদে কাজ করতেন। তার স্বামীর নাম আইয়ুব আলি। তাদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়।

দ্বিতীয়জন- তাজবীর হাবিব (২৯)। বাবার নাম আহসান হাবিব। সনাক্ত করেন খালু মো. নিজাম। তাজবীর হাবিব ওই ভবনের তৃতীয় তলায় মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ঈশিতা (২৪)। বাবার নাম ইকবাল হোসেন। সনাক্ত করেন তার চাচা নজরুল ইসলাম। তার পায়ের নুপুর দেখে ঈশিতাকে সনাক্ত করা হয়। তৃতীয় তলায় একাউন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঈশিতা।

চতুর্থজন- মোখলেসুর রহমান বাচ্চু (৩৫)। বাবা জামাল উদ্দিন। সনাক্ত করেন চাচাতো ভাই রজব আলী। বাচ্চু ওই ভবনের যে কোনো একটি ফ্লোরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আরও ৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খবর পেয়ে অনেকেই ঢামেকে আসছেন। তবে লাশের অবস্থা দেখে চেনার উপায় না থাকায় সনাক্ত করতে পারছেন না।

এদিকে, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, অগ্নিকাণ্ডে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।   তিনি আরও জানান, আগুনের খবর পাওয়ার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। অগ্নিকাণ্ডে তিনজন দগ্ধ এবং ধোঁয়ায় দু’জন অসুস্থও হয়েছেন।

তবে, পরে দগ্ধ ও আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয় বলে জানান শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক। এদের মধ্যে পুরুষ ১০ ও নারী তিনজন বলেও জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বাংলানিউজকে জানান, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিভিন্ন স্থানে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে আছে বলে শুনেছি।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, কারখানাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে কেমিকেল দ্রব্য ছিল বিধায় আগুন নেভাতে সময় লেগেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আগুনের কারণ জানা যাবে।

প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা পর ৭টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও দমকলকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান মেজর শাকিল নেওয়াজ।

তিনি আরও জানান, কারখানা ভবনটি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। এর ভেতরে এখনও অনেক রকমের কেমিকেল দ্রব্য রয়েছে। এ কারণে হতাহতদের অনুসন্ধানে দমকলকর্মীদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।

অ্যাপকো লিমিটেডের নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম বাংলানিউজকে জানান, শনিবার কারখানার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিফটে ৭৫-৮০ জন কাজ করছিলেন।

এছাড়া, অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ কারখানার দুই নিরাপত্তাকর্মী ও এক শ্রমিককে উদ্ধার করে ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন- কারখানার নিরাপত্তা প্রধান তৌহিদুল ইসলাম (৪২) ও নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেন (৩৫)। এদের মধ্যে তৌহিদের শরীরের প্রায় ২৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে, আর ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে কামালের। এ দু’জনের পর কারখানার নিচতলার শ্রমিক রবিউল ইসলামকে (২৫) দগ্ধাবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়।

অ্যাপকো লিমিটেডের মালিকের নাম আনিসুজ্জামান খান। ওই কারখানায় ১৪৩ জন কর্মচারী কাজ করেন বলে জানান কারখানার নিচ তলার ফটোকপি দোকানের কর্মী জহির।

অ্যাপকো লিমিটেডের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মমিনুল ইসলাম টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, আমি কারখানার বাইরে ছিলাম। বিকেলে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনি। কাছে গিয়ে দেখি বয়লার বিস্ফোরণে আমাদের কারখানায় আগুন লেগেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডিউটি অফিসার ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা চেষ্টার পর ‍আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অর্থ সহায়তা
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক। তিনি জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জানান, এ কমিটি আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবে। আশা করা যায়, অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ জানা যাবে।

**মিরপুরে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন, ৮ জনের মৃত্যু
** মিরপুরে বহুতল মার্কেটে আগুন, কয়েকজন নিহতের আশঙ্কা

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫, আপেডট ২২২৬, ০১৫৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।