ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের চিড়িয়াখানা রোডের আবাসিক এলাকায় কারখানা বসিয়ে তৈরি করা হতো প্লাস্টিক পণ্য। বয়লার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে দার্জ্য পদার্থের কারণে নিমিষেই পুড়ে কয়লা হয় আট প্রাণ।
দার্জ্য পদার্থের কারণে সতর্কতার সঙ্গে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদেরও।
শনিবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাঁচ তলা বিশিষ্ট ভবনে ‘অ্যাপকো বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে ওই কারখানার নিচতলায় বয়লার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভি ডিফেন্স।
ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে আটজন পুড়ে মরার পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন দু’জন। এছাড়া হুড়োহুড়িতে জখম হয়েছেন আরও দু’জন।
আগুন নেভানো ও তল্লাশির পর রাত ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়।
‘দার্জ্য পদার্থ এবং ভবনজুড়ে প্লাস্টিক সামগ্রী থাকায় অল্প সময়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন চারজন, এদের দু’জন জখম হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, আগুনের খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালায়।
সরেজমিনে ওই ভবন ঘুরে দেখা গেছে, ঘিঞ্জি পরিবেশের কারখানায় নিচতলায় বয়লার ছাড়াও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ডেও আগুন লাগে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ৪০/৪৫ জন শ্রমিক কাজ করার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও স্থানীয়রা বলছেন অন্তত একশ’ শ্রমিক সে সময় কাজ করছিলেন।
ঘটনার সময় কারখানার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সেলিম ও রাসেল। প্রথমে ধোয়া এবং পরে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশর এলাকা কেঁপে উঠে বলে জানান তারা।
বাংলানিউজকে তারা জানান, নিচতলায় বিস্ফোরিত গ্যাস সিলিন্ডারের কাছে দগ্ধ দু’জনের লাশ দেখেছেন। এছাড়াও সেখানে রাখা একটি গাড়িতে আরো একটি শিশু দগ্ধ হয়। বিস্ফোরিত গ্যাস সিলিন্ডারও সেখানে দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক মোবারক হোসেন ভবন ঘুরে বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় পুড়ে যাওয়া লাশ পাওয়া গেছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অফিস ও স্টাফ কোয়ার্টার ছাড়াও প্লাস্টিকের সামগ্রী ছিল। কারখানায় ‘ওয়ান টাইম’ পানির গ্লাস ও খাবার প্যাকেট তৈরি হতো।
অ্যাপকো লিমিটেডের মালিকের নাম আনিসুজ্জামান খান। কারখানা পুড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও মালিককে সেখানে পাওয়া যায়নি। আর কারখানার সামনে ভিড় করছিলেন নিহতদের স্বজনরাও।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, কারখানায় প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হতো। ‘হাইড্রোজেন সায়ানাইট’র মত দার্জ্য পদার্থ এবং মাল্টি হ্যাজার্ড জিনিসপত্র থাকায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করেছে।
উদ্ধার তৎপরতার মধ্যেই হঠাৎ করে বাতাসে ঝাঁঝালো গ্যাসের কারণে রাত ৮টার দিকে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিছু পরে তা থেমে যায়।
আবাসিক এলাকায় কারখানা কেন- প্রশ্নে আসলামুল হক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে কারখানায় ১২/১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। আর সংসদ সদস্য আসলামুল হক বলেন, অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হকও।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে বলে জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক।
ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সংসদ সদস্য।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি সাংবাদিকদের জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ কমিটি আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেবে।
আশা করা যায়, অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ জানা যাবে।
একদিকে ঘিঞ্জি পরিবেশ, অন্যদিকে উৎসুক জনতার ভিড় আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৫