ঢাকা, বুধবার, ০ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মাটির মান বুঝে সার প্রয়োগে মহাপরিকল্পনা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫
মাটির মান বুঝে সার প্রয়োগে মহাপরিকল্পনা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: চাষিরা যাতে করে বেশি পরিমাণে ফলন পাওয়ার লক্ষ্যে মাটির গুণগত মান বুঝে মানসম্মত সার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এসআরডিআই সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে পাঁচটি গবেষণাগারে ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলে সীমিতভাবে মৃত্তিকা নমুনা বিশ্লেষণের পাশাপাশি সার নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়।

শুরুতে ৫০০ নমুনা বিশ্লেষণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে একই অঞ্চলে সাত হাজার নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। মৃত্তিকা ও নমুনা বিশ্লেষণের কাজ দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে জানান এসআরডিআই।
 
সেই লক্ষ্যে ব্যাপক পরিসরে খুলনা, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট ও ঢাকা বিভাগে সার পরীক্ষাগার ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যাতে করে চাষিরা মাটির গুণগত মান বুঝে সার প্রয়োগ করেন এবং বেশি ফসল ঘরে তুলতে পারেন।
 
এছাড়া, ‘পরীক্ষাগার ও গবেষণা কেন্দ্রস্থাপন’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার ভবন নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। ভূমি সম্পদ এবং সারসহ কৃষি রাসায়নিক দ্রব্যের সুবিবেচনাপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ে বিভিন্ন উপকারভোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
 
সেই লক্ষ্যে রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলায় এক হাজার ৪৮ বর্গ মিটার দোতলা ভবন নির্মাণ এবং বরিশাল জেলায় ৫২৪ বর্গমিটার বিদ্যমান একতলা ভবনের ওপর দোতলা নির্মাণ করা হবে।
 
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বিদ্যমান সার পরীক্ষাগারগুলো সচল রাখা ও সারের গুণগতমান রক্ষায় সার পরীক্ষা কাযর্ক্রম আরো সম্প্রসারণ করা হবে।
 
রাসায়নিক সার বিশ্লেষণ ও ভেজাল সার নিরূপণ বিষয়ে সেমিনার বা কর্মশালাও করা হবে, যাতে করে চাষিদের কেউ ঠকাতে না পারেন।
 
বিভাগগুলোতে রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য সারের নমুনা সংগ্রহ ও ভেজাল সার নিরূপণ বিষয়ক কৃষক, সার ব্যবসায়ী ও অন্যান্য সম্প্রসারণ কর্মী এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মকর্তা পর্যায়েও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
 
প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো কিছু দীর্ঘ পরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে এসআরডিআই। পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান উদ্যোগ জুন ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ করবে এসআরডিআই।

প্রকল্পের মাধ্যমে মার্কারি বিশ্লেষণের সুবিধা সৃষ্টির জন্য হাইড্রেট জেনারেশন সিস্টেমসহ একটি অ্যাটমিক অ্যাবজরপশন স্পেক্ট্রোফটোমিটার (এএএস) সংগ্রহ করা হবে।   এতে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে, প্রায় তিন কোটি টাকা।
 
সার গবেষণা কাযর্ক্রম আরো প্রসারিত করতে গবেষণাগারে নির্মিত ভবনে প্রশিক্ষণ হল ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কেনা হবে। এতে প্রায় ব্যয় ধরা হয়েছে, এক  কোটি টাকা।

এসআরডিআই সূত্র জানায়, সার পরীক্ষাগারের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সারের গুণগতমান নির্ধারণ প্রকল্পের প্রায় এক দশক আগে সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে এ সব যন্ত্রপাতি অধিকাংশ অচল এবং তা প্রতিস্থাপন করা জরুরি।
 
সার পরীক্ষা দিন দিন বাড়ছে এবং কখনও দ্রুত সময়ে ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই, গবেষণাগারগুলোতে সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য কিছু নতুন যন্ত্র কেনা হবে। অপরদিকে, মৃক্তিকার গুণগতমান বুঝে যাতে করে কৃষক সার প্রয়োগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে কুইক নাইট্রোজেন এনালাইজার, মাইক্রোওয়েভ ডাইজেশন সিস্টেম, নাইট্রোজেন ডাইজেশন, ডিস্টিলেশন সিস্টেম ও হটপ্লেট কেনা হবে।
 
মার্কারি বিশ্লেষণের সুবিধা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এসআরডিআই’র একটি কক্ষ সংস্কার করা হবে। এখানে একটি মাইক্রোওয়েভ ডাইজেশন সিস্টেম, নাইট্রিক পারক্লোরিক অ্যাসিড ফিডহুড স্থাপন, বিজ্ঞানীদের ব্যবহারের জন্য মাস্ক, বিশেষ ধরনের পোশাক কেনা হবে।

এছাড়া বাংলাদেশে সুবিধা না থাকায় কমপক্ষে চারজন বিজ্ঞানীকে মার্কারি বিশ্লেষণ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈদেশিক কোনো গবেষণাগারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের  মহারিচালক ও কৃষিবিদ এ জেড এম মমতাজুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, কৃষককে কোনো সার ব্যবসায়ী যাতে করে ভেজাল দিতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই দেশব্যাপী আমরা মহাপরিকল্পনাটি গ্রহণ করেছি। কৃষকের জমির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করেই কৃষক যাতে সঠিক সার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে নানা ধরনের গবেষণা করা হবে।

তিনি আরো বলেন, কৃষকের জমিতে কোন সার ও প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রয়োজন, সেই বিষয়টি পরীক্ষা করা হবে; যাতে করে কৃষক বেশি ফসল ঘরে তুলতে পারেন। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও বিদেশে খাদ্য রফতানির কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই মহাপরিকল্পনা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।