ঢাকা, বুধবার, ০ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জাবিতে লেকের পানি সেচে ধান চাষ!

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫
জাবিতে লেকের পানি সেচে ধান চাষ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জাবি থেকে: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পেছনের লেকের পানি সেচে ধান চাষ করা হচ্ছে। লেকের পানি সেচে ধান চাষের নিয়ম না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাছ চাষের জন্য লেক ইজারা নিয়ে স্থানীয়দের কাছে ধান চাষের জন্য ইজারা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।



এদিকে লেক সেচে মাছ শিকার করার ফলে জীববৈচিত্র্যের ‍গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অসংখ্য পোকা-মাকড় ও ছোট ছোট প্রাণী মারা গেছে। ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ পরিস্থিতিতে দ্রুত এই লেকটি সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন একর ২৭ শতাংশের এই লেকটির পশ্চিম ও দক্ষিণ কোণায় পাড় কেটে পানি সেচে মাছ শিকার করা হচ্ছে। পাশে একটি যান্ত্রিক অগভীর নলকূপের সাহায্যেও পানি সেচের ব্যবস্থা করেছেন ইজারাদার।

সেচকৃত লেকের উত্তর পাশে কয়েকজন দিনমজুর ধানের চারা রোপন করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষার্থী ধানের চারা রোপনে বাধা দেন। এ সময় শ্রমিকরা স্থানীয় বাসিন্দা আমির উদ্দিনকে ডেকে আনেন। আমির উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে ধান চাষের জন্য কোষাধ্যক্ষ অফিসের হারুনের কাছ থেকে পাঁচশ’ টাকার বিনিময়ে লেকের কিছু অংশ ইজারা দিয়েছেন তিনি।

পরে বিষয়টি এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. নুরুল আমিনকে জানালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গার্ড পাঠিয়ে পানি সেচ
বন্ধ করেন।

এস্টেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন একর ২৭ শতাংশের এই লেকটি ৪ বছরের জন্য ইজারা নেন কোষাধ্যক্ষ অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার বিনিময়ে লেকের পাশেই ১১ বিঘা জমি ৪ বছরের জন্য ইজারা নেন তিনি। লেকটিতে মাছ চাষ ও ১১ বিঘা জমিতে ধান চাষের জন্যই খোরশেদ আলমকে ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে এস্টেট অফিস সূত্রে জানা গেছে।

তবে খোরশেদ আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে চার বছর আগে সেখানকার একটি নিচু জমিতে বাঁধ দিয়ে আমরাই সেটাকে লেকে রূপান্তর
করেছি। পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে আমরা লেকটি ৪ বছরের জন্য ইজারা নেই। মাছ চাষ করতে হলে রাক্ষুসে মাছ নিধনের জন্য প্রতি বছরই লেকটি সেচে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, যেহেতু আমরাই বাঁধ দিয়ে লেকটি বানিয়েছি সেহেতু আমাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য লেকের নীতিমালা প্রযোজ্য হবে না। আমাদের নিজেদের লোকজনই সেখানে ধান রোপন করছিলো। আমরা অন্য কাউকে ইজারা দেইনি।

জানতে চাইলে এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. নুরুল আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব শুধু এস্টেট অফিসের নয়। আমি এস্টেট অফিসের মূল দায়িত্বে নেই। আমাকে এখানে

অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এস্টেট অফিসের যিনি মূল দায়িত্বে রয়েছেন তাকে প্রশাসন পরীক্ষা শাখায় বসিয়ে রেখেছে।

লেক সেচে মাছ শিকারের নিয়ম নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব এককভাবে এস্টেট অফিসের নয়। নিরাপত্তা অফিসের দায়িত্বও রয়েছে। তবে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে যা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, অতিদ্রুত লেকটি সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ও সম্পদ রক্ষায় শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামবো।

লেকের পানি সেচে মাছ শিকার করতে মীর মোশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন লেক ও সুইমিং পুল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় লেক শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এস্টেট অফিসের দায়িত্বে অবহেলার জন্য এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিলে প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করেছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।