ঢাকা: বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মাশুল গুণেই বাণিজ্যিকভাবেই পণ্য পরিবহন করতে হবে ভারতকে। দ্বিপাক্ষিক নৌ-প্রটোকলের আওতায় দেশটিকে আরো এক দফা ৩৫ হাজার টন খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হলেও এরপর আর এ সুযোগ থাকছে না।
পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর ফলে কার্যত স্থল পথেও স্থায়ী ট্রানসশিপমেন্ট পাচ্ছে ভারত। একই সঙ্গে খাদ্যশস্য পরিবহনকারী যানবাহন থেকে সব ধরনের চার্জ ও ফি আদায় করে বাংলাদেশেরও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এর আগে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ভারতকে দ্বিপাক্ষিক নৌ-প্রটোকলের আওতায় ভারতকে মানবিক কারণে ২৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগেও ভারত ১০ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য পরিবহন করে ত্রিপুরায়।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এরপর ভারত বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ত্রিপুরাতে পণ্য পরিবরহন করতে হলে বাণিজ্যিক-ভাবে করতে হবে। সব ধরনের চার্জ ও ফি নির্ধারনে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালানোর জন্যও পররাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
১৩ জানুয়ারির ওই সভায় সভাপত্বি করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিসহ সভায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত ফি এবং চার্জের বিনিময়ে পণ্য ট্রানসশিপমেন্ট করার অর্থ স্থল পথে স্থায়ী ভাবে ট্রানসশিপমেন্ট পাচ্ছে ভারত। এ ব্যবস্থা চালু হলে ফি দিয়েই পণ্য পরিবহন করবে ভারত। যতো পণ্য যাবে ততো ফি পাবে বাংলাদেশ। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করে অনুমতি দিতে হবে না।
ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সেখানে ভারতের ভেতর দিয়ে যেতে হয় ১,৬৫০ কিলোমিটার পথ। ফলে ব্যয় ও সময় বাঁচানোর জন্য এই ট্রানসশিপমেন্টটি ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ভারতও ট্রানসশিপমেন্টটির জন্য আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার সড়কের অবকাঠামো উন্নয়নে এক হাজার ৫৭২ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান দিচ্ছে বাংলাদেশকে। দুই লেনে থাকা এ রাস্তাটি ভারতের অনুদানে চার লেন করা হবে। এমনই প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে রাজি হয়েছে প্রতিবেশী এই দেশ।
এছাড়া আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে কনটেইনার টার্মিনালে (আইসিটি) পরিণত করতে সহজ শর্তে ঋণ দিতেও রাজি হয়েছে ভারত।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, দুই লেনের আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কটির অবকাঠামোগত অবস্থা এত ভাল নয়। ট্রানসশিপমেন্টের জন্য এটিকে আরো চওড়া ও ভারবাহী ক্ষমতা সম্পন্ন করা প্রয়োজন। ভারত এতে বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে।
সম্প্রতি আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কটি পরিদর্শন করেছেন ওবায়দুল কাদের ও পঙ্কজ শরণ।
আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়কটি চার লেন করার বিষয়ে ট্রানসশিপমেন্ট ছাড়াও বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির পণ্য পরিবহন বাড়বে বলে ভারত যুক্তি দিয়েছে।
এই ট্রানশিপমেন্ট প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ১৯৭২ সালের মূল বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী কোন স্থল ট্রানসশিপমেন্টের সুযোগ ছিল না। কারণ, একটি দেশের আভ্যন্তরীণ ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়ার অনেক রকম ঝুঁকি আছে। এবার যদি বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে স্থলপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পায় ভারত তাহলে স্থলপথেও ট্রানসশিপমেন্ট পাচ্ছে তারা। তবে সেটা স্থায়ী বলা যাবে না। কারণ, যেকোন চুক্তি যত বছরের জন্যই হোক না কেন যেকোন দেশ ইচ্ছে করলেই বদলাতে পারে।
তিনি বলেন, অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা ধরনের ফি ও চার্জ যথাযথভাবে দিয়েই শুধু নয় বাংলাদেশকেও একই ধরনের ট্রানশিপমেন্টের সুযোগ ভারতেরও দেওয়া উচিত। যদিও ভারতের ভূমি ব্যবহার করে নেপাল বা অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের ব্যবসা করার সুযোগ খুব বেশি নেই।
সে দিক দিয়ে এই ট্রানসশিপমেন্টে ভারতই বেশি লাভবান হবে উল্লেখ করে এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলেন, আশা করি সকল ধরনের ঝূঁকি বিবেচনায় নিয়ে এবং সব ধরনের চার্জের বিনিময়েই ভারতকে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে সরকার।
এর আগে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতীয় এনজিসির টার্বাইন ও ভারী পণ্যসামগ্রী পরিবহনের অনুমতি পেয়ে ২০১১ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের ৭২৬ মেগাওয়াটের পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী ভারী যন্ত্রাংশ বোঝাই ১২০ চাকার ট্রেইলার পরিবহন করে ভারত। এরপর পরিবহন করে ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য। তবে সেবার বাংলাদেশের ছোট ছোট ট্রাক ব্যবহার করা হয়।
আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্তপথে ট্রানজিট প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ শুল্কমুক্তভাবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এ সব পণ্য প্রবেশ করে।
** আবারও মানবিকতা দেখালো বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫