ঢাকা: ‘আপা! আপা! আমার ফ্লাইট তো দুপুরে। আমার পাসপোর্ট দেন।
‘মাকে বলেছি, শীতে কাঁথা দিতে, দিল না। এখন খুব শীত করছে। একটা কম্বল দেন না, এত শীত কেন?’
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন কুমিল্লায় পেট্রোল বোমায় দগ্ধ মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।
সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন রাশেদ। রাশেদের শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
বুধবার দুপুরে তার কাতারে যাওয়ার কথা ছিল।
রাশেদসহ দগ্ধ ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। রাশেদের সঙ্গে আসা চাচা ব্যবসায়ী মো. হানিফও দগ্ধ হয়েছেন।
অবজারভেশন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, পোড়ার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে রাশেদ। মুখসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশই পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে পৌনে এগারোটায় অপারেশন থিয়েটার থেকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে রাশেদকে আনা হয়েছে। তার পাশে চাচা মো. হানিফ।
যন্ত্রণা কাতর রাশেদ বারবার চিৎকার করছেন আর নার্সদের বলছেন,‘আপা! আপা! আমার শরীর শীতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মাকে কাঁথা দিতে বলেছি, কিন্তু দেননি। ’
‘মা বলে, বাবা শীত লাগবে না। শীত কমে গেছে। বিদেশ গিয়ে কাঁথার কথা তো ভুলে যাবি। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই তো বিদেশ পৌঁছে যাবি। সেখানে কম্বল কিনে গায়ে দিস। ’
কিছুক্ষণ পরেই রাশেদের শয্যা পাশে গেলে বিড় বিড় করে রাশেদ বলে,‘আজ মঙ্গলবার না বুধবার। বুধবার হলে তো দুপুরে আমার ফ্লাইট। আপা, আমার পাসপোর্ট দেন। ’
জমি বন্ধক রেখে ভিসার টাকা দিছি। না গেলে জমি ছাড়াবো কিভাবে। এত শীত লাগে কেন রে! আমি বাড়ি যাব, বাড়ি যাব? মাঝে মাঝে এমন অসংলগ্ন কথা বার্তা বলে চিৎকার করে উঠছেন রাশেদ।
রাশেদের চাচা মো. হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, পাসপোর্ট ও ভিসা সবই গেছে। কিন্তু ভাতিজার জীবন শেষ। বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা ভাতিজার জীবন থাকবে কি-না এটাই এখন চিন্তার বিষয়।
রাশেদের শয্যা পাশে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক বাংলানিউজকে জানান, রাশেদের মুখ থেকে শুরু করে শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রাশেদ চকরিয়া শাহাগচান্দা এলাকার মৃত সৈয়দ আহমেদের ছেলে।
রাশেদ ছাড়াও কুমিল্লায় দগ্ধ হওয়া অবজারভেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসারত বাকিরা হলেন, চকোরিয়া পাহাড়চান্দা গ্রামের সালেহ আহমেদের ছেলে হানিফ, নারায়ণগঞ্জ জেলার ওলুপাড়া কাত্তাহকান্দার গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে শফিকুল, মানিকগঞ্জ জেলার জয়মণ্ডপ এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে জিলকদ, জামালপুর কমলনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ফারুক আহমেদ ও আরিফ শিকদার।
** নিহত ৭টি মরদেহ কুমেক মর্গের বারান্দায়
চৌদ্দগ্রামে পেট্রোল বোমায় নিহত ৭
** বার্ন ইউনিটে আরো ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
** গভীররাতে বাসে পেট্রোল বোমা, বাবা-মেয়েসহ নিহত ৭
** দগ্ধ ২০ যাত্রী ঢাকা-কুমিল্লা-চৌদ্দগ্রাম হাসপাতালে
** রাজশাহীতে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, দগ্ধ ৩
** বানিয়াচংয়ে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, আটক ১
** মালিবাগে বাসে আগুন, শাহজাদপুরে ককটেল-মিছিল
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫