ঢাকা: ‘রাজনীতি বুঝি না। খই বিক্রি করে সংসার চালাই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ওয়ার্ডে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবরোধকারীদের ছুড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ শফিকুল ইসলাম’র প্রশ্ন।
মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) ভোর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবরোধকারীদের ছুড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন শফিকুল।
শফিকুল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ওলুপাড়া কাত্তাহকান্দার গ্রামের আলাউদ্দিনের বড় ছেলে। ৫ ভাই দুই বোনের মধ্যে শফিকুল বড়। বোমায় শফিকুলের হাত, মুখ, পিঠ ও মাথাসহ শরীরের ২৮ ভাগ পুড়ে গেছে।
কক্সবাজারে খই বিক্রি করে সংসার চালাতেন শফিকুল। মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের বাসে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন শফিকুল।
বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, শফিকুলের মুখমন্ডল অনেকটা বিকৃত। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, আর পানি চাচ্ছেন বার বার। পাশে বসা চাচা মনির হোসেন পানি দিতে চাইলেও কর্তব্যরত নার্স পানি দিতে বারণ করছেন।
শেষে কলা খাওয়ার বাহানা শফিকুলের। চাচা শফিকুলকে মুখে কলা খাওয়াচ্ছেন। কলা গিলতে গিয়েও বারবার মূর্চা যাচ্ছেন শফিকুল।
সংসারের উপার্জনক্ষম ভাই শফিকুলকে দেখছে আর দু’ চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ছাড়ছে ভাই মনোয়ার হোসেনে।
বারবার বলছেন,‘ ভাই রে ভাই, তুই না থাকলে সংসার চলবে কি করে? অবরোধকারীরা আর কাউকে দেখল না?’
যন্ত্রণায় কাতর শফিক বাংলানিউজকে বলেন,‘ পাঁচবছর আগে অভাবী সংসারের হাল ধরতে কক্সবাজারে খই বিক্রি শুরু করি। বাবা অনেকটাই অক্ষম। দুই মাস আগে মা মারা গিয়েছেন। ’
তিনি বলেন,‘ মায়ের কুলখানি করতে টাকা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। মায়ের না হলেও এখন শরীরের যে অবস্থা তাতে আমার কুলখানি করতে হবে। ’
শফিকুল কান্না করে বলেন,‘ বাসের মধ্যে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ আগুন আগুন বলে চিৎকার। তারপর বের হওয়ার অবিরাম চেষ্টা। জানালে ভেঙ্গে বের হওয়ার পর আর বলতে পারবো না। ’
তিনি বলেন,‘ আমাদের পাশের সিটে দেখেছি অনেকেই হাত, পা ভেঙ্গে গেছে। আগুনে জ্বলছে। জীবন্ত মানুষ কিভাবে জ্বলে, না দেখলে বুঝবেন না। ’
বাঁচার আকুতি জানিয়ে শফিকুল বলেন,‘ আমি না বাঁচলে আমার ভাই-বোন পথে বসবে। আর কত প্রাণ গেলে দেশে শান্তি আসবে শফিকুলের প্রশ্ন?’
শফিকুলের চাচা মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,‘ শফিকুলের সঙ্গে সব শেষ। মুখ থেকে উরু পর্যন্ত যে পোড়া তাতে বাঁচার আশা নেই। ছেলেটার খুব কষ্ট হচ্ছে। ’
তিনি বলেন,‘ সংসার আর ভাই বোনের কথা চিন্তা করে বিয়ে পর্যন্ত করেনি। কে দেখবে ছেলেটাকে। কে দেখবে তার সংসার? বাবা তো জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। ’
বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন,‘ তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যেকোন সময় অবস্থার অবনতি হতে পারে। ’
শফিকুল ছাড়াও কুমিল্লায় দগ্ধ হওয়া অবজারভেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসারত বাকিরা হলেন, চকোরিয়া পাহাড়চান্দা গ্রামের সালেহ আহমেদের ছেলে হানিফ, চকরিয়া শাহাগচান্দা এলাকার মৃত সৈয়দ আহমেদের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, মানিকগঞ্জ জেলার জয়মণ্ডপ এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে জিলকদ, জামালপুর কমলনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ফারুক আহমেদ ও আরিফ শিকদার।
ছয়জনের মধ্যে শফিকুল ও রাশেদুল ইসলামের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাশেদুলকে সকালে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে তাকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে সোয়া একটার দিকে তাকে আবারও আইসিইউতে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫
** ‘আপা! ফ্লাইট তো দুপুরে, আমার পাসপোর্ট কই’
** নিহত ৭টি মরদেহ কুমেক মর্গের বারান্দায়
** বার্ন ইউনিটে আরো ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
** গভীররাতে বাসে পেট্রোল বোমা, বাবা-মেয়েসহ নিহত ৭
** দগ্ধ ২০ যাত্রী ঢাকা-কুমিল্লা-চৌদ্দগ্রাম হাসপাতালে
** রাজশাহীতে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, দগ্ধ ৩
** বানিয়াচংয়ে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, আটক ১
** মালিবাগে বাসে আগুন, শাহজাদপুরে ককটেল-মিছিল