ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পেট্রোল বোমায় দগ্ধ জিলকদ

সৌদি যেতে পারবো তো!

রহমত উল্যাহ ও নাজিম উদ্দিন খান লিয়ন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
সৌদি যেতে পারবো তো! ছবি: রাজিব / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ভালোভাবে লেখাপড়া করি না বলে বাবা তার এক নিকটাত্মীয়কে বলে ভিসা এনেছে (সৌদি আরবের ভিসা)। ভিসার আসার পর বাবাই বলেছে, কক্সবাজার থেকে বেড়িয়ে আয়।



‘চার বন্ধুকে নিয়ে বেড়াতে গেলাম। বেড়ানোই কাল হল। সৌদি গেলে পরিবার ও দেশ দুটোরই লাভ হতো। পেট্রোল বোমায় পুড়ে তো সব শেষ। এখন সৌদি যেতে পারবে তো?’

প্রশ্নগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ যন্ত্রণা কাতর জিলকদ আহমদের।

মানিকগঞ্জ জেলার শিঙ্গাইর জয়মণ্ডপ এলাকার জহিরুল ইসলামের বড় ছেলে জিলকদ। সোমবার দিবাগত গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অবরোধকারীদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন তিনি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জিলকদ’র পেটের অংশ বেশি পুড়ে গেছে। এছাড়া উরুসহ শরীরের বেশ কিছু অংশ দগ্ধ হয়েছে তার।

কক্সবাজার বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দগ্ধ হন জিলকদ, শরীফুল, আলী হোসেন ও ফারুক আহমেদ। এরমধ্যে জিলকদ ও ফারুককে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

জিলকদ বাংলানিউজকে বলেন,‘ বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে প্রকৌশলী হবো। ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। লেখাপড়া করি না বলে বাবা বিদেশ পাঠাতে চায়। ’
 
তিনি বলেন,‘দুই ভাইয়ের মধ্যে আমি বড়। দরিদ্র পিতার সংসারের হাল ধরবো ভেবে বিদেশ যেতে রাজি হই। এখন বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা শরীর নাড়ানো কষ্ট। ’

জিলকদ বলেন,‘চার বন্ধু পাশাপাশি সিটে বসে ঘুমাচ্ছি। আগুনের তাপে ঘুম ভাঙ্গে। জানালা দিয়ে লাফ না দিলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। ’

পাশের সিটে বসা কয়েকজন চিতার আগুনের মতো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে জানিয়ে জিলকদ বলেন,‘ জীবন্ত মানুষ কিভাবে চিতার আগুনে পুড়ে মরে স্বচক্ষে দেখলাম। ’

কিছুই করার ছিল না। প্রাণ বাঁচাতে সবাই ছুটোছুটি করছে। বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। মুহূর্তের মধ্যে আগুন জীবন্ত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল।

জিলকদ’র চাচা আবদুল আজিজ সরকার বাংলানিউজকে বলেন,‘ অভাবের সংসার। বাবা অনেক কষ্টে নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে সৌদির ভিসা এনেছে। এখন কিভাবে যাবে?’

তিনি বলেন,‘বেড়ানোই তার কাল হলো। গতকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে ফোন দিয়ে বলেছে রাতে আসবে। সকাল হতে না হতেই তার এক বন্ধু ফোন দিয়ে জানালো সে বার্ন ইউনিটে। ’

তিনি আরও বলেন,‘ সবাই সহায়তা করে টাকা দিয়েছি ভিসার জন্য। ভিসা থাক আর যাক ছেলেটা বাঁচবে কিনা নিশ্চয়তা চাই। আর কত হলে দেশ শান্ত হবে প্রশ্ন করেন তিনি। ’

জিলকদ ছাড়াও অবজারভেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসারত বাকিরা হলেন, চকোরিয়া পাহাড়চান্দা গ্রামের সালেহ আহমেদের ছেলে হানিফ, জামালপুর কমলনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ফারুক আহমেদ ও আরিফ শিকদার।

ছয়জনের মধ্যে শফিকুল ও রাশেদুল ইসলামের অবস্থা আশংকাজনক। রাশেদুলকে সকালে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। পরে তাকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে সোয়া একটার দিকে তাকে আবারও আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫

** দগ্ধ শফিকুলের সংসার চালাবে কে?
** মণিরামপুরে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকালে ট্রাকচাপায় নিহত ২
** ‘আপা! ফ্লাইট তো দুপুরে, আমার পাসপোর্ট কই’
**  নিহত ৭টি মরদেহ কুমেক মর্গের বারান্দায়
** বার্ন ইউনিটে আরো ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
** গভীররাতে বাসে পেট্রোল বোমা, বাবা-মেয়েসহ নিহত ৭
** দগ্ধ ২০ যাত্রী ঢাকা-কুমিল্লা-চৌদ্দগ্রাম হাসপাতালে‍
** রাজশাহীতে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, দগ্ধ ৩
** বানিয়াচংয়ে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, আটক ১
** মালিবাগে বাসে আগুন, শাহজাদপুরে ককটেল-মিছিল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।