ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দরিদ্র অন্ত:সত্ত্বা মায়েরা পাবেন নগদ ৮০০ টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
দরিদ্র অন্ত:সত্ত্বা মায়েরা পাবেন নগদ ৮০০ টাকা ফাইল ফটো

ঢাকা: দরিদ্র অন্ত:সত্ত্বা মায়েদের গর্ভকালীন মোট চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে। এর সঙ্গে প্রতিবারে ২০০ টাকা করে মোট নগদ ৮০০ টাকা দেওয়া হবে।



দেশের ৫ লাখ দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও শুন্য থেকে ৫ বছর বয়সী মা যারা আর্থিকভাবে অচ্ছল তাদেরকে নগদ অর্থ দেবে সরকার। দেশের রংপুর ও ঢাকা বিভাগের ৭ জেলার ৪২টি উপজেলার ৪৪৩টি ইউনিয়নের ১৬ লাখ পরিবার থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ দরিদ্র মায়েদের নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় এই সহায়তা দেওয়া হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৭ কোটি ৮১ লাখ। বাকি ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দিবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে এপ্রিল ২০১৫ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত।

মঙ্গলবার(৩ ফেব্রুয়ারি’২০১৫) শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির(একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

এতে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।

পরে একনেক বৈঠক নিয়ে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, দরিদ্র অন্ত:সত্ত্বা মায়েদের গর্ভকালীন মোট ৪বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে। এর সঙ্গে প্রতিবারে ২০০ টাকা করে মোট নগদ ৮০০ টাকা দেওয়া হবে। দেশের পাঁচ লাখ দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী মা যারা আর্থিকভাবে অচ্ছল তাদেরকে নগদ অর্থ দেবে সরকার।

শূন্য থেকে ২৪ মাস বয়সী দরিদ্র শিশুদের দরিদ্র শিশুদের প্রতিমাসে একবার শরীর বৃদ্ধির পরীক্ষা করে নগদ আরও ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া ২৫ থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের প্রতিমাসে একবার শরীর পরীক্ষা করা হবে এবং নগদ এক হাজার টাকা দেওয়া হবে। ’

মন্ত্রী আরও বলেন, মায়েরা যদি সুস্থ না থাকে তবে সুস্থ সন্তান পাওয়া সম্ভব নয়। চীনেও এক সময় ছোট ছোট মানুষ ছিল তারা এখন অনেক লম্বা। এই ক্ষেত্রে প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের বাচ্চারাও অনেক লম্বা ও শারীরিকভাবে সুঠাম হবে। ’

প্রকল্পের সারসংক্ষেপে আরও দেখা গেছে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর দরিদ্রতা ম্যাপকে বিবেচনা করে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহে প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে বাস্তবায়িত হবে। কারণ এই জেলাগুলোতে দারিদ্র্যতার হার ৩৫ ভাগেরও বেশি। সেই সঙ্গে এখানে অপুষ্টির হারও বেশি। তবে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পটি ৬৪টি জেলাতেই বাস্তবায়িত হবে।

অপরদিকে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা প্রতিমাসে অনুষ্ঠিত শিশু পুষ্টি ও উন্নত শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ করলে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন।
শিশু ও নারী মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়া এবং দরিদ্র মায়েদের দারিদ্রতা নিরসন করাই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

বৈঠকে ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ৪ হাজার ৪৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, একনেকে ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৮টি প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৮৪৭ কোটি ১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৭ কোটি ৪৪ টাকা। প্রকল্পগুলো মধ্যে নতুন ৬টি এবং সংশোধিত প্রকল্প ২টি।
 
‘ধানুয়া-এলেঙ্গা অ্যান্ড ওয়েস্ট ব্যাংক অব বঙ্গবন্ধু ব্রিজ-নালখা গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন প্রজেক্ট’ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৫০৭ কোটি টাকা। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড বাস্তবায়ন করবে, যার মেয়াদকাল জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৯।
 
‘গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৯৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যার পুরোটাই সরকারি অর্থায়নে হবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০১৬।

‘গৌরীপুর-মোহনা সড়কটি কুমিল্লা-সিলেট হাইওয়ে পর্যন্ত সম্প্রসারণ’ প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যার পুরোটাই সরকারি অর্থায়ন। প্রকল্পটির মেয়াদকাল নভেম্বর ২০১৪ থেকে অক্টোবর ২০১৭।

৭১ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৫০টি বিজি ও ৫০টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৭। প্রকল্পটি ৬৭৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। যার মেয়াদকাল জুলাই ২০০৯ থেকে জুন ২০১৭।


‘কিশোরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার যুমনেশ্বরী, চিকলী ও চারলকাটা নদী তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সরকারি অর্থায়নের এই প্রকল্পটির মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০১৫ থেকে জুন ২০১৭ পর্যন্ত।

১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র এলাকায় সেচ সুবিধা দিতে ‘বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়ানের এই প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ১ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত।
 
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলামসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।