ঢাকা: ‘বেশ কয়েকদিন তার ছোট ভাই নিখোঁজ। মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবির পর থেকে মা-বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারেন না।
কিন্তু ভাইকে তো পেলেন না, বরং নিজে ফিরলেন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে। এক ছেলেকে হারানোর শোকের সঙ্গে আরেক ছেলেকে দগ্ধ দেখে অসহায় মা-বাবার চোখে বান বয়ে যাবে!’
কথাগুলো বলছিলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট অবজারভেশনের সামনে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ আরিফ শিকদারের দুলা ভাই তারা মুন্সী।
আরিফ শিকদার ফরিদপুর জেলার ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের আমের আলী শিকদারের ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে আরিফ দ্বিতীয়।
মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দগ্ধ হন তিনি।
বোমায় আরিফের পেট, উরু, পাসহ শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। জানালা ভেঙে বের হতে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে গলার ডান পাশের হাড়। ’
তারা মুন্সী বাংলানিউজকে বলেন, অভাবী সংসার হলেও, ‘ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো। অভাবী সংসারকে সচ্ছল করতে আরেক ভাই সজিব মালেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবিতে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে কেউ জানে না। মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে দুই হাজার টাকা হাওলাত করে ভাইকে কক্সবাজার খুঁজতে যায় আরিফ।
গতকাল বাড়িতে জানিয়েছে সজিবকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে ফিরে আসছে আরিফ। সজিবকে না পেলেও, জীবন্ত দগ্ধ আরিফের অবস্থার কথা শুনলে মা-বাবাকে বাঁচানো যাবে না। ’
আরিফ শিকদারের দুলাভাই আক্ষেপ করে বলেন, ‘দিনে এনে দিনে খাওয়া সংসার। এক ছেলে নিখোঁজ, আরেক ছেলে অর্ধমৃত (দগ্ধ)। এভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে?’
আরিফের পাশে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া আর হাড় ভাঙার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আরিফ। মাঝে মাঝে চিৎকার করছেন। তার অবর্তমানে সংসার চলবে কিভাবে সেই চিন্তায় অস্থির তিনি।
আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই বাড়ি থেকে বলে বের হয়ে এসেছে। মা-বাবাকে বুঝাতে না পেরে খুঁজতে গেলাম। এখন মা-বাবা তো আমার লাশ বহন করবে। ’
ঘটনার বর্ণনা করে আরিফ বলেন,‘আমার পাশের সিটে বসা লোক জানালা ভেঙে বের হয়। আমি দুই সিটের মাঝখানে আটকা পড়ি। পাশের সিটের লোকজন জীবন্ত পুড়ে গেছে দেখে ভেবেছিলাম বাঁচব না। কিছুটা পুড়ে যাওয়ার পর কেউ একজন আমাকে টান মেরে বের করে। এতে আমার হাড় ভেঙ্গে গেছে। ’
তিনি আরও বলেন, আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। তাহলে কেন আমাদের বলির পাঠা বানানো হচ্ছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। ’
বার্ন ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসরা জানিয়েছেন, অবজারভেশনে আরিফকে রাখা হয়েছে। তার পেট ও উরু বেশি পুড়েছে।
আরিফ ছাড়াও কুমিল্লায় দগ্ধ হওয়া অবজারভেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসারত বাকিরা হলেন, চকোরিয়া পাহাড়চান্দা গ্রামের সালেহ আহমেদের ছেলে হানিফ, মানিকগঞ্জ জেলার জয়মণ্ডপ এলাকার জহিরুল ইসলামের ছেলে জিলকদ, জামালপুর কমলনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ফারুক আহমেদ।
ছয়জনের মধ্যে শফিকুল ও রাশেদুল ইসলামের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাশেদুলকে সকালে আইসিইউতে নেওয়া হয়ৰ এরপর তাকে অবজারভেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে সোয়া একটার দিকে তাকে আবারও আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫
** শেষ স্মৃতিও কেড়ে নিল রাজনীতির আগুন
** ভাগিনা পুড়ে কয়লা, বোন কোথায় জানিনা
** সৌদি যেতে পারবো তো!
** দগ্ধ শফিকুলের সংসার চালাবে কে?
** মণিরামপুরে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকালে ট্রাকচাপায় নিহত ২
** ‘আপা! ফ্লাইট তো দুপুরে, আমার পাসপোর্ট কই’
** নিহত ৭টি মরদেহ কুমেক মর্গের বারান্দায়
** বার্ন ইউনিটে আরো ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
** গভীররাতে বাসে পেট্রোল বোমা, বাবা-মেয়েসহ নিহত ৭
** দগ্ধ ২০ যাত্রী ঢাকা-কুমিল্লা-চৌদ্দগ্রাম হাসপাতালে
** রাজশাহীতে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, দগ্ধ ৩
** বানিয়াচংয়ে ট্রাকে পেট্রোল বোমা, আটক ১
** মালিবাগে বাসে আগুন, শাহজাদপুরে ককটেল-মিছিল