জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলার রায় বুধবার (০৪ ফেব্রুয়ারি)। আলোচিত এই হত্যা মামলার রায়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক ও সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জুবায়েরের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ। সংগঠনের সভাপতি তন্ময় ধর ও সাধারণ সম্পাদক দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এর আগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হত্যার বিচার হয়নি, তাই এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এ রায়ে প্রমাণিত খুনিদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়। খুনিদের উপর যেন কোনো ধরণের সহানুভূতি বা অনুকম্পা প্রদর্শন করা না হয়।
‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’ এর সভাপতি কলি মাহমুদ বলেন, আমরা আশা করি জুবায়ের হত্যার মামলায় আদালত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবে এবং রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারী জাহিদুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, যে সকল চিহ্নিত খুনি আছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করি। এই রায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনেক টালবাহানা হয়েছে। কাঠগড়া থেকে আসামি পালিয়ে গেছে। তাই এই মামলার রায় নিয়ে টালবাহানা হলে তা মেনে নেয়া হবে না। আগামীকাল যে রায় ঘোষণা তারিখ দেওয়া হয়েছে তা আগামীকালই ঘোষণা করা হোক। যে সকল চিহ্নিত আসামী আছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও আন্দোলনকারী সৌমিত জয়দ্বীপ বলেন, রায়ে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি বিচার কার্যকর হওয়াটা আরও বেশি প্রত্যাশিত। বাংলাদেশে বিচার কার্যকর না হওয়ার অনেক নজির আছে। এটা কেবল নিম্ন আদালতের রায় হতে যাচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কি না, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। নিম্ন আদালতের রায় যাই হোক না কেন, এখনও দীর্ঘপথ হাঁটতে হবে। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, যেহেতু এটা হত্যাকাণ্ড, তাই অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সাজা আজীবন বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনেও আমরা সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (আইন) মো. মাহতাব-উজ-জাহিদ বলেন, ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি রোববার স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে বিভাগ থেকে বের হওয়ার পর ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা কথা বলার জন্য জুবায়ের আহমেদকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে কুপিয়ে জখম করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফেলে রেখে আসে। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রাতেই জুবায়ের মারা যায়।
এ হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) মো. হামিদুর রহমান বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যে মামলার রায় দেয়া হবে বুধবার।
এরপর জুবায়ের হত্যার বিচার দাবি করে বিভিন্ন ব্যানারে আন্দোলনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা ‘শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে আন্দোলনে নামে।
শিক্ষার্থীরা প্রথমদিকে নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলনে নামলেও পরবর্তীতে সব সংগঠন মিলে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলন অব্যাহত রাখে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আরজু মিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নিরাপত্তা কর্মকর্তা আজিম উদ্দিনকেও অপসারণ করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সাথে প্রশাসন আন্দোলনের মুখে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের পরিবর্তন করতেও বাধ্য হন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে তদন্ত সাপেক্ষে ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৪ ও ৫ নং ধারা অনুযায়ী ৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিলসহ ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অপর ৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারসহ ২ বছরের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল ও এই দুই বছর ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
বহিষ্কারসহ ছাত্রত্ব বাতিল ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষিত শিক্ষার্থীরা হলো, খন্দকার আশিকুল ইসলাম (প্রাণীবিদ্যা বিভাগ), রাশেদুল ইসলাম রাজু (দর্শন বিভাগ), খান মো. রইছ (প্রাণীবিদ্যা বিভাগ), জাহিদ হাসান (প্রাণীবিদ্যা বিভাগ), ইসতিয়াক মেহবুব অরুপ (দর্শন বিভাগ), মাহবুব আকরাম (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), নাজমুস সাকিব তপু (প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ)।
বহিষ্কারসহ ২ বছরের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল ও এই দুই বছর ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষিত শিক্ষার্থীরা হলো, মাজহারুল ইসলাম (ইতিহাস বিভাগ), কামরুজ্জামান সোহাগ (দর্শন বিভাগ) নাজমুল হুসেইন প্লাবন (লোকপ্রশাসন বিভাগ), শফিউল আলম সেতু (পরিসংখ্যান বিভাগ), অভিনন্দন কুন্ডু (পরিসংখ্যান বিভাগ), মো. মাহমুদুল হাসান মাসুদ (ইতিহাস বিভাগ)।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫