ঢাকা: অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মরিয়ম আক্তার রুপা (০৭)।
মুখমণ্ডল ও হাত-পায়ের আঙুল ব্যতীত দুধে-আলতা রঙের রুপার শরীরের বাকি অংশ ঢাকা পড়েছে প্যাচানো সাদা ব্যান্ডেজের নিচে।
বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার সময় ঢামেকে বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে রুপা। নাক ও মুখ দিয়ে নলের সাহায্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে যা জানা গেলো, তাও কম কষ্টের নয়। রুপার জন্ম গাজীপুরের বোরদা এলাকায়। দুই বছর আগে রুপার বাবা আব্দুল মতিন খোকন ব্লাড ক্যান্সারে কাছে হার মেনে চলে যান না ফেরার দেশে।
এর পরে মা নার্গিস আক্তার পোশাক কারখানায় কাজ করে কোলে-পিঠে করে মানুষ করছেন রুপাকে। সেই আদরের মেয়ে রুপা ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে পেট্রলবোমার বলি হয়ে বুধরাব রাতে ঠাঁই নিয়েছে বার্ন ইউনিটে।
undefined
গাজীপুরের পুলিশ লাইন এলাকায় ঢাকা-গাজীপুর সড়কের নলজানীতে বলাকা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে হরতাল-অবরোধ সমর্থকরা। ওই বাসে নানীর সঙ্গে যাত্রী হয়েছিল রুপা। পেট্রোল বোমার আগুনে আরো ৫ জনের সঙ্গে পুড়ে যায় শিশু রুপার ছোট্ট শরীর।
মেয়ের শরীর যখন আগুনে গ্রাস করছে, তখন রুপার মা নার্গিস পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। একমাত্র সন্তানের এ অবস্থার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। এরপর থেকে কিছুই ঠিক করে বলতে পারছেন না তিনি। মেয়ের দুর্ঘটনার পর মুখে একটু পানিও দেননি নার্গিস।
undefined
এদিকে, রুপার মতোই পুড়ে গেছেন একই বাসের যাত্রী নূরনবী (২৬)। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাওড়াটিয়া গ্রামের বাবাহারা নূরনবীর শরীরেরও শরীরের অনেক জায়গা ঝলসে গেছে আগুনে।
জয়দেবপুরে রংমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। ছয় মাস ধরে ঢাকাতে আছেন তিনি। কিছু টাকা রোজগার করে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিলেন ছোট মেয়েকে দেখতে। কিন্তু অবরোধের আগুন তাকে নিয়ে এসেছে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে।
আগুন রেহাই দেয়নি আরেক পিতৃহারা শিশু রাকিবকেও। অগ্নিদগ্ধ রাকিবের চিত্রটা যেন আরো করুণ। জন্মের পরেই মারা যান রাকিবের বাবা জামাল উদ্দিন শেখ। বর্তমানে রাকিব প্রতিদিন গাজীপুরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার থেকে মরিচ, বেগুন, আলু ও পেঁয়াজসহ নানা ধরনের সবজি কুড়ায়। এতে করেই মা রাশিদা ও নিজের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করে সে।
undefined
ছেলের পুড়ে যাওয়ার খবরে কিংবর্তব্যবিমুঢ় মা রাশিদা সন্তানকে নিয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করে শেষ পর্যন্ত রাত ৩টার কিছু আগে রাকিবকে নিয়ে ঢামেকে আসেন। কিন্তু মেটাতে পারেননি অ্যাম্বুলেন্স খরচা। এজন্য বেশ কথাও শুনতে হয় তাকে।
একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানের এ অবস্থায় পাগলপ্রায় মা রাশিদা। বার্ন ইউনিটে প্রায় সবাইকে ধরে আর্তনাদ করে তিনি বলতে থাকেন, ‘বাবায় টুকান টুহায়, আমার রিজিক মিলায়। বাইপাস আড়তে আলু, পিয়াজ, মরিচ টুহায় আমার রিজিক মিলায়। বাপে আমার বাঁচবো তো! বাপ গ্যালে আমার রিজিক দিব কে?’
** গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ ৬
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫