ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলের লাগাতার হরতাল-অবরোধে রাজধানীতে চোরাগোপ্তা হামলা হয় এমন ২০টি স্পট নির্ধারণ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এ স্পটগুলোকে ‘ডেঞ্জার জোন’ আখ্যা দিয়ে নাশকতা ঠেকাতে বিশষ নজরদারি শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গোয়েন্দা সংস্থার ‘ডেঞ্জার জোন’ আখ্যা দেওয়া এ স্পটগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে এলাকাগুলোকে ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ৠাব) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহল দিচ্ছে।
ডেঞ্জার জোনগুলোকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে গত কয়েকদিন হরতাল-অবরোধে হরতাল-অবরোধ সমর্থকরা তেমন নাশকতা করতে পারেনি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ইব্রাহিম ফাতেমি বাংলানিউজকে বলেন, স্থানগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত কয়েকদিন আমাদের কঠোর অবস্থানের কারণে নাশকতা করতে পারেনি হরতাল-অবরোধ সমর্থক দুর্বৃত্তরা। যার কারণে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। গত কয়েকদিন রাজধানীতে গণপরিবহন ও প্রাইভেট পরিবহন চলাচল অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তার দাবি, আমরা এটিকে শূন্যের কোটায় আনতে চাই। নগরবাসীর নিরাপত্তা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের যে শক্ত অবস্থান সেটি এখনও রয়েছে। নাশকতাকারীদের যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র থেকে জানা গেছে, রাজধানীতে যে সকল পয়েন্টগুলোতে বেশি নাশকতা বা চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে সেগুলোর তালিকা তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পয়েন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত থানার কাওলা, গুলশানের শাহজাদপুর থেকে সুবাস্তু, বাড্ডার উত্তর বাড্ডা থেকে মেরুল বাড্ডা, রামপুরা থানার বিটিভি ভবন থেকে মালিবাগ, খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে মানিকনগর বিশ্বরোড, যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড ও ডেমরা রোড, ধোলাইপাড়, শান্তিনগর থেকে কাকরাইল, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর, পল্টন, শাহবাগ, মিরপুর, কালশি রোড, শ্যামলি, আগাঁরগাও এবং উত্তরার আব্দুল্লাপুর।
সূত্র জানায়, চলমান হরতাল-অবরোধে এ এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি নাশকতা হয়েছে। বিশেষ করে বাস-ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, যাত্রীবেশে আগুন, ভাংচুর, ককটেল নিক্ষেপ এবং বিক্ষোভ মিছিল হয়ে থাকে। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী এলাকার কাঠের পুলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে ৩০ জনের বেশি দগ্ধ হন এবং কয়েকজন মারা যান। শাহবাগের মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা হয়। এতে ১০ জন দগ্ধ হন। গুরুতর আহত কনেস্টবল শামিম স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়াও বাড্ডা, গুলশানের শাহজাদপুর, রামপুরা, খিলক্ষেত, গাবতলী ও আজিমপুর- এ এলাকাগুলোতে যাত্রীবেশে বাসে উঠে কৌশলে আগুন দেওয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে নাশকতারোধে এ স্থানগুলোতে পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি এবং যাত্রীবেশে নাশকতাকারীদের গ্রেফতারেও যাত্রী হয়ে বাসে থেকে নজরদারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। সম্প্রতি গুলশানের শাহজাদপুরে শিবির কর্মীরা ঝটিকা মিছিল ও উপর্যুপুরি ককটেল হামলা শুরু করেন। পুলিশ প্রতিরোধে এগিয়ে গিয়ে গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
একই রকমভাবে র্যাবের সদস্যরা এ সকল পয়েন্টে নজরদারি করে চলেছেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ- পরিচালক মেজর রুম্মান মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে র্যাব অভিযান চালাচ্ছে। পাশাপশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারিও রয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবণী শংকর কর বাংলানিউজকে বলেন, কাঠের পুলের বাসে পেট্রোল বোমা হামলার পর পুরো এলাকা জুড়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খিলগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, খিলগাঁও ফ্লাইওভার ও এর চারপাশ আমরা কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণে গত কয়েকদিন নাশকতা করার সুযোগ পায়নি হরতাল-অবরোধ সমর্থক দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও থানা এলাকায় নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো মূল্যে নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে আমরা সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করছি। কেউ যেন থানা এলাকায় নাশকতা করার সুযোগ না পায়, সেজন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
পল্লবী থানার ওসি সৈয়দ জিয়াউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, নাশকতা ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা সাদা পোশাক ও পোশাকে নজরদারি অব্যাহত রেখেছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৫