ঢাকা: মহাত্ম গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব ঝর্ণাধারা চৌধুরী সমাজসেবায় ২০১৫ সালের একুশে পদকের জন্য মনোনীতি হয়েছেন।
এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশি প্রথম নারী হিসেবে সমাজসেবায় ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পদ্মশ্রী পদক লাভ করেন ঝর্ণাধারা চৌধুরী।
রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালের একুশে পদকের জন্য ঝর্ণাধারী চৌধুরীসহ ১৫ জনকে মনোনীত করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সমাজসেবায় ঝর্ণাধারা চৌধুরী ছাড়াও শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের, অধ্যাপক ড. অরুপ রতন চৌধুরী ও মনোনীত হয়েছেন।
সত্তর বছরের বেশি বয়স্ক মহিয়সী ও কুমারী ঝর্ণাধারা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
একুশে পদকের জন্য মনোনীত ঝর্ণাধারা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, স্বীকৃতিতে আমি সমাজ, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের সব মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, আজকের স্বীকৃতি ১৯৪৬ থেকে আরম্ভ করে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত সমাজ পরিবর্তনের স্বীকৃতি।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই সবার মন পরিবর্তন হোক। চাই সবার প্রতি সবার ভালোবাসা। দূর হোক হানাহানি, ফিরে আসুক শান্তি।
সমাজকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানবকল্যাণ কাজ করতে মন পরিবর্তন করতে হবে। শারীরিক সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান।
গান্ধীভক্ত সংসার ত্যাগী ঝর্ণাধারা চৌধুরী ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রমথ চৌধুরী ও মা আশালতা চৌধুরী।
তিনি চট্টগ্রাম খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সংঘাত বেড়ে গেলে ১৯৫৪ সালে গান্ধী আশ্রমের সমাজকর্মী হিসেবে গান্ধীর অহিংসা মতবাদ প্রচারে ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গ্রামে।
শ্রীমতী ঝর্ণাধারা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘের প্রায় ৫০০ শিশু ও কিশোরীকে পাক-হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচিয়ে আগরতলা নিয়ে যান।
তিনি গান্ধী আশ্রমে গান্ধীর শান্তি, সম্প্রীতি ও অহিংসার বাণীকে মানবকল্যাণে ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছেন।
ঝর্ণাধারা চৌধুরী ১৯৯৮ সালে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক ‘বাজাজ’ পুরস্কার, ২০০২ সালে নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি হিসেবে ‘অনন্যা’ পুরস্কার লাভ করেন।
সমাজসেবায় ২০০৩ সালে নারীপক্ষ দুর্বার নেটওয়ার্ক, নিউইয়র্কের ওল্ড ওয়েস্টবেরি ইউনিভার্সিটির শান্তি পুরস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৭ সালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজসেবায় অবদানের জন্য সাদা মনের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পান।
২০১০ সালে শ্রীচৈতন্য পদক, চ্যানেল আই’র রাঁধুনীর কীর্তিমতী নারী পুরস্কার, ২০১১ সালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের রণবীর সিং পুরস্কারে ভূষিত হন।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও কুমিল্লা জেলার প্রায় ১২ লাখ দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া এ ট্রাস্টের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ শিক্ষা লাভের পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য চাষ, কুটিরশিল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫
** একুশে পদক পাচ্ছেন ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি