রাজশাহী: ‘আজ বাসায় স্পেশাল মানুষের জন্য’ হবে বকের রোস্ট। পাঁচটি বক হাতে নিয়ে এমন একটি ভিডিও কনটেন্ট ফেসবুক পেজে প্রচার করেছিলেন রাজশাহীর ভ্লগার আল-আমিন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দেওয়া ওই স্মারকলিপিতে ভ্লগার আল-আমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর বক আর বুনোহাঁস শিকার করে খাওয়া নিয়ে ভিডিও প্রচার করা সেই ভ্লগারকে খুঁজছে রাজশাহী বন বিভাগও। রাজশাহী বন বিভাগ বলছে, মামলা হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বের করবে।
গেল কয়েক দিন আগে আল-আমিন ও আরেকজন ভ্লগার ‘আজ বাসায় স্পেশাল মানুষের জন্য’ হবে বকের রোস্ট। পাঁচটি বক হাতে নিয়ে এমন ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করেন। ভ্লগার আল-আমিন ও তুলি বালিহাঁস নিয়ে বলেন, গ্রামের বাড়ি গেছেন- সেই উপলক্ষে বিল থেকে ধরে আনা হয়েছে হাঁসপাখিগুলো। আজ হাঁসপাখির মাংস রান্না হবে। আর আল-আমিন ও তুলি নামে দুজন ভ্লগারের সেই ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পরিযায়ী পাখি শিকার করে খাওয়ার এমন কর্মকাণ্ডে সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। রাজশাহীর দুই ভ্লগারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি উঠেছে। গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাজশাহীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ স্মারকলিপি দিয়েছে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারকে।
ইয়্যাস-এর সভাপতি শামীউল আলীম ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আল-আমিন ও তুলি প্রকাশ্যে পরিযায়ী পাখি ধরার প্ররোচনা ও জবাই করে রোস্ট করে খাওয়ার প্ররোচনা দিয়েছেন, যা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইনানুযায়ী কোনো ব্যক্তি উল্লিখিত কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখির ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস শরীরের অংশ সংগ্রহ করলে, দখলে রাখলে, কেনা-বেচা বা পরিবহন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং এ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
জানতে চাইলে ‘ইয়্যাস’-এর সভাপতি শামীউল আলীম ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, তারা এমন ঘটনায় সংক্ষুব্ধ। তাই তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভ্লগার আল-আমিন ও তুলির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকারিদের আইনের আওতায় আনা ও মহানগরজুড়ে পাখির বিচরণকেন্দ্র ও আবাসস্থলকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে সেখানে আলো দূষণ ও শব্দদূষণ রোধ করা হবে। সেই লক্ষ্যে স্মারকলিপির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককেও।
অন্যদিকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। তবে ভ্লগারদের খোঁজ এখনও পাননি। তবে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের নামে মামলা হবে, প্রস্তুতি চলছে। আর মামলা দায়ের হলে পুলিশ প্রশাসনই তাদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
এসএস/আরবি