ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পেট্রোল বোমায় নিহত হাসিবের বড় ভাইয়ের আক্ষেপ

টি এম মামুন ও রফিকুল আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫
পেট্রোল বোমায় নিহত হাসিবের বড় ভাইয়ের আক্ষেপ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: বড় ভাই বলেছিল, এখন সময় খারাপ, দেশের অবস্থা ভাল নয়, ট্রাকের শ্রমিক হয়ে কাজ করতে যাসনে। তথনও কি জানতেন এমনটা হতে পারে!

ভাইয়ের বারণ সত্ত্বেও ট্রাকে চালকের সহযোগী (হেলপার) হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমার আঘাতে প্রাণ গেল হাসিব উদ্দিনের (২৩)।



৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের সাতমাথায় তার বড় ভাই সোহেল রানার সঙ্গে শেষ কথা হয় হাসিবের।

ওই দিন বড় ভাই সোহেল হাসিবকে বলেছিলেন, এখন ট্রাকে হেলপার হিসেবে কাজ করতে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। কে কোথায় কখন পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করবে, তার ঠিক নেই। তুই যেহেতু রাজমিস্ত্রীর সহকারীর (যোগানদার) কাজ জানিস, সেটাই কর। দেশের অবস্থা ভালো হলে তখন ট্রাকে গিয়ে কাজ করিস।

বড় ভাইয়ের নিষেধ সত্ত্বেও রাজমিস্ত্রীর কাজ না পেয়ে অভাবের কারণেই ট্রাকে কাজ করতে গিয়েছিল হাসিব।

শনিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) নাটোর থেকে খালি ট্রাক নিয়ে চালকের সঙ্গে বগুড়া যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের ট্রাকটি (ঢাকা মেট্রো-ট ১১-৪৮৫৫) নাটোর-বগুড়া সড়কে শাজাহানপুরের রুপিহার এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে হাসিবসহ চারজন দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তির পর রাত ২টার দিকে মারা যান হাসিবুল।

হাসিবুলের বড় ভাই বগুড়া বিআরটিসি ডিপো'র বাস চালক সোহেল রানা বলেন, তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে হাসিব দ্বিতীয়। নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। প্রায় দেড় বছর আগে বগুড়ার শাহাজানপুর উপজেলার বেজোড়া গ্রামের ইয়াসিন আলীর মেয়ে ইয়াসমিন খাতুনকে বিয়ে করেন। তিন মাস আগে তাদের সংসারে ইসরাফিল নামের নতুন অতিথিও এসেছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার পাঁচগাছিতে গ্রামের বাড়ি হলেও বগুড়া জেলা সদরের চারমাথায় তাদের একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানেই থাকতেন হাসিব। হাসিব আওয়ামী লীগের একজন কর্মীও ছিলেন, জানান তিনি।

রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাসিবের লাশ পাঁচগাছি গ্রামে পৌঁছালে কান্নার রোল পড়ে যায়। স্বজন ও প্রতিবেশিদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। হাসিবের মরদেহ এক নজর দেখার জন্য গ্রামের মানুষ ছুটে আসে। মা শেফালী খাতুন এবং স্ত্রী ইয়াসমিনের হৃদয় ফাটা আর্তনাদ অনেককেই কাঁদিয়েছে তখন। হাসিবের দেহ এতোটাই পুড়ে গিয়েছিল যে চেনাই যাচ্ছিল না।

কাঁদতে কাঁদতে হাসিবের বাবা আব্দুস ছাত্তার বলেন, বাবার কাঁধে ছেলের লাশ, এতবড় বোঝা আমি বইবো কেমন করে? বিনা অপরাধে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, তাদের যেন অবশ্যই বিচার করা হয়।   

হাসিবের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাফিউল ইসলাম সেখানে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ছিলেন। এ সময় তিনি হাসিবের পরিবারকে তাৎক্ষণিক নগদ ২০ হাজার টাকাও দেন। এছাড়া দশ হাজার টাকা দেন কাজিপুর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম।  

সাইফুল ইসলাম বলেন, কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে এভাবে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মানুষ মারা সম্ভব নয়। যারা এমন করছে তারা দেশ ও জাতির কলঙ্ক। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।

তিনি জানান, হাসিবের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। হাসিব নিজেও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ ঘটনা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তার মাধ্যমে হাসিবের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।