ঢাকা: শীতের সকালে গাছ থেকে সদ্য নামানো খেজুরের রস খাওয়ার আনন্দ আজও গ্রামাঞ্চলে অমলিন। শীতের দিনে গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে রসের বাহারি পিঠার সমাহার হয়েই থাকে।
তবে রাজধানীতে খেজুরের রস একটু দুষ্প্রাপ্যই বটে, তার ওপর যদি হয় গাছ থেকে সদ্য নামানো রস।
সোমবার গাছ থেকে সদ্য নামানো এই টাটকা খেজুর রসের দেখা মিললো রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে।
রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কের ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে একজন গাছি খেজুরের রস নিয়ে গাছ থেকে নেমে আসছেন।
গাছ থেকে নেমে সেখানেই রস বিক্রি করতে শুরু করলেন তিনি। প্রতি গ্লাস রস ২০ টাকা এবং এক লিটার ১০০ টাকা। পার্কে ঘুরতে আসা অনেকেই বোতল ভরে কিনে নিতে লাগলেন। দামও জিজ্ঞাসা করলেন না কেউ। মনে হচ্ছে তারা প্রতিদিনই নিয়ে থাকেন এই রস।
৩০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল হাড়ির সব রস। রস বিক্রি শেষে কথা বলতে চাইলে মুখ ভরা হাসি দিয়ে রসওয়ালা বলেন, ‘কি বলবেন ভাই। ’
ফরিদপুর জেলা ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ এলাকার কটু মাদবরের ছেলে দোলোয়ার হোসেন। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাজধানীতে বিভিন্ন ব্যবসা করেন।
শীত মৌসুমে বাপ-দাদার খেজুরের গাছ কাঁটা পেশা রাজধানীতে এসেও ছাড়তে পারেননি। তাই শীত এলেই পার্কের খেজুরের গাছ ও গুলশান, বনানী, বাড়িধারা এলাকা মিলে প্রায় ৫০টি গাছের সন্ধান করে প্রতি বছর রসের ব্যবস্থা করেন তিনি।
গাছ কাটলে মালিককে অর্ধেক দিতে হয় বাকি অর্ধেক বিক্রি করে এক থেকে দেড় হাজার টাকার প্রতিদিন আয় হয় তার।
বাংলানিউজকে দেলোয়ার বলেন, দুইমাস খেজুরের রস সংগ্রহ করা যায় তবে এক মাস আগে থেকে গাছ প্রস্তুত করতে হয়।
যে পরিমাণ রস পাওয়া যায় তা দিয়ে গুড় তৈরি সম্ভব কিন্তু রস তৈরি করতে অনেক জায়গা ও লাকড়ি প্রয়োজন। আমার তো ঢাকায় থাকার নিজের কোন জায়গা নেই।
কোন রকম একটি সেমি পাকা ঘর ভাড়া করে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করি। তবে গাছ থেকে রস নামানোর পর কিছু সময়ের মধ্যেই তা বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে থাকেন। খেজুরের গুড় অর্ডার দিলে এলাকা থেকে এনে দেই।
গুলশান-২ এর বাসিন্দা রাফিয়া সুলতানা বলেন,পার্কে প্রতিদিন হাঁটতে আসি। ঢাকায় বসবাস করার পর থেকে খেজুরের রস তেমন খাওয়া হয়ে উঠে না। রস পাওয়া গেলেও তাতে স্যাকারিন মেশানো হয়। যে কারণে ভাল রস পাওয়াও সম্ভব নয়।
তবে গুলশান-২ প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে আমি প্রতিবছর নিয়মিত এই লোকটির কাছ থেকে রস নিয়ে থাকি। দাম একটু বেশি হলেও রসে কোন কিছু মেশানো থাকে না। চোখের সামনেই গাছ থেকে এনে বিক্রি করে।
তিনি বলেন,প্রয়োজনে গুড়ের অর্ডার দিলে লোকটি ব্যবস্থা করে দেয়। সেই গুড়ের মধ্যেও কোন সমস্যা থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫