ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বদরগঞ্জে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য

ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
বদরগঞ্জে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য ছবি: প্রতীকী

রংপুরঃ: রংপুরের বদরগঞ্জে পল্লবী রানী নামে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন কবিরাজের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।

আবার কেউ বলছেন নিপাহ ভাইরাসে মেয়েটি মারা গেছে।

পল্লবী উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাচারীপাড়ার মিলন চন্দ্র রায়ের মেয়ে এবং উপজেলার গোপীনাথপুর হায়দারীয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রী।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৪ ফেব্রুয়ারি পল্লবীর জ্বর হয়। মাত্রাতিরিক্ত জ্বরের কারণে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। ফলে দরিদ্র বাবা-মা ওই এলাকার ঝলঝলিপাড়ার কবিরাজ যোগেশ চন্দ্র রায়কে বাড়িতে ডেকে আনেন। কবিরাজ পল্লবীকে দেখে বলেন, তাকে পঞ্চ দেবতা ধরেছে। ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে পঞ্চ দেবতাকে তাড়াতে হবে। এরপর শুরু হয় কবিরাজি। অসুস্থ মেয়েটিকে ঝাড়ফুঁকের নামে ওই কবিরাজ তিনদিন ধরে শারীরিক নির্যাতন করেন।

অব্যাহত নির্যাতনের একপর্যায়ে মেয়েটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ফলে হাত-পা নাড়াচাড়া করার ক্ষমতাও সে হারিয়ে ফেলে। বাবা-মা এ অবস্থায় ৬ ফেব্রুয়ারি মেয়েটিকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও কবিরাজের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেয়েটিকে রংপুরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়েটির মৃত্যু হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহের সৎকার করা হয়।

খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা মেয়ের বাড়িতে ছুটে গেলে তার মামা দুলাল রায় অভিযোগ করেন, ওই ভণ্ড কবিরাজ দেবতা তাড়ানোর নামে মেয়েটির ওপরে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। প্রতিবেশী খাদেমুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়েটির মৃত্যুর জন্য ওই ভণ্ড কবিরাজই দায়ি। তারা ওই কবিরাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন।

পল্লবীর বাবা মিলন চন্দ্র রায় বলেন, ‘মুই গরীব মানুষ। সবায় কছিলো তোমার বেটিক ভূত ধরেছে, বাড়িতে কবিরাজ ডাকে আনো। চারদিন কবিরাজি চিকিৎসা নিছি, ভালো হয় নাই। বেটির হাত-পাও ওঠে না। কবিরাজ কয় সমস্যা নাই, ঝাড়ফুঁকেই ভালো হইবে। কিন্তু বেটির অবস্থা খারাপ হইলে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় রংপুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়াও বেটিক বাঁচপার পারো নাই। ’

কবিরাজের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেটিতো দুনিয়া থাকি চলি গ্যালো, অভিযোগ করি কি হইবে?’ 

মৃত পল্লবীর বড়ভাই কমল চন্দ্র রায় বলেন, রংপুর মেডিকেলের চিকিৎসকরা বলেছেন পল্লবী নিপাহ ভাইরাসে মারা গেছে।
 
গোপীনাথপুর হায়দারীয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম প্রামাণিক বলেন, পল্লবী সপ্তম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী। শুনেছি চিকিৎসার নামে ওই কবিরাজ মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।
 
কবিরাজ যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের দেখেই পালানোর চেষ্টা করেন। পরে তিনি বলেন, ‘মোর চিকিৎসায় ওই রোগী (পল্লবী) মারা যায়নি। মুই ঝাড়ফুঁক সঠিক ভাবেই করছু। কিন্তু মোর ওপর বিশ্বাস পায়নি রোগীর বাপ-মা। এজন্য তার মরণ হইছে। ’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. হেমন্ত রায় চৌধুরী বলেন, নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগির মৃত্যুর আশঙ্কা শতকরা ৯৫-৯৭ ভাগ। এটা খুবই ছোঁয়াচে। এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। তিনি বলেন, নিপাহ ভাইরাস সনাক্ত করতে লালা ও রক্ত সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠাতে হয়। সেটি রংপুর মেডিকেলের চিকিৎসকরা করেছেন কিনা তা’ জানতে হবে। তবে তিনি ওই রোগির মৃত্যুর কারণ নিপাহ ভাইরাস কিনা তা সরাসরি বলতে রাজি হননি।
 
এদিকে, মেয়েটির ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ডেথ ডিউ টু ইররিভারসিবল কার্ডিওরেসপিরেটরি ফেইলর ডিউ টু এনকোফাইলাইটিস। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।