ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আইটিতে ক্যারিয়ার গড়তে প্রযুক্তিতে পড়াশোনা জরুরি নয়

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫
আইটিতে ক্যারিয়ার গড়তে প্রযুক্তিতে পড়াশোনা জরুরি নয় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: এক সময় কম্পিউটার চালানোকেই যারা ভাগ্য মনে করেছে সেই তারাই এখন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। তাই প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠেছে প্রযুক্তি নির্ভর ক্যারিয়ার।

 

এই ক্যারিয়ার গঠনে শুধুই যে প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট থাকা প্রয়োজন, এমনটি নয়। যদি প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা থাকে তবে যে কোনো বিষয়ে পড়াশুনা করে তরুণ-তরুণীরা সহজেই প্রযুক্তির ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে চারদিন ব্যাপী শুরু হওয়া ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫’ এর শেষ দিনে হল অব ফেমে ‘বেসিস স্টুডেন্টস ফোরাম’ আয়োজিত ‘আইটি ক্যারিয়ার: স্টেপিং ইনটু দ্য ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশ্যে এমনই দিক নির্দেশনা তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের বক্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রতিটি মানুষের কাজ করার দক্ষতা আর ক্ষমতাকে দুইভাবে ভাগ করা যায় উল্লেখ করে অন্যরকম গ্রুপের উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, মানুষর সব কাজ দুইভাবে করে থাকে। আমরা সচেতনভাবে যেটা করি তা ভেবেই করি। আর অবচেতন মনে যেটা করি তা না ভেবেই করি। এই অবচেতন মনে কিছু করতে হলে তা আবেগ থেকে আসতে হয়। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশ উপযুক্ত অস্ত্রের অভাব থাকা স্বত্বেও দেশের তরুণেরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। এটা তারা অবচেতন মনে ভালোবাসা থেকেই পরিণতি না জেনে করেছিলো। তবু তারা সফল হয়ে এসেছিলো। ঠিক এমনই কোনো কাজ করতে হলে প্রথমে তা আমাদের মাঝে নিবিড়ভাবে প্রবেশ করাতে হবে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজের ৯৫% কাজ নিজেদের অবচেতন মনে করে থাকি। তাই আইটিতে ভালো কিছু করতে হলে অবচেতন মনেও আইটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা থাকতে হবে।

‘প্রযুক্তির সঙ্গে কাজ করতে চাইলে নিজের মধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর ক্ষুধা বাড়াতে হবে। নিজেদের ও পরিবারের জন্য এমন কিছু তৈরি করতে হবে যা সবাইকে স্পর্শ করবে বলেও মন্তব্য করেন অন্যরকম গ্রুপের উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে বর্তমানে ৭ লাখ মানুষ আইটি নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশে আগামী ১০ বছরের মধ্যে আইট পার্ক ও সফটওয়্যার পার্ক তৈরি করা হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের গ্রামাঞ্চলসহ সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে।

মোবাইল অপারেটর রবি এর কর্পোরেট ভাইস-প্রেসিডেন্ট শারমিন সুলতানা বলেন, আইটি ক্যারিয়ার গঠনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন কার্নিভাল ও ওয়ার্কশপের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। তরুণদের জ্বলে ওঠার পেছনে যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন তার সবখানেই আমরা আছি এবং থাকবো সবসময়।

সেলিম রকিন সফটওয়্যারের সিটিও শাহ আলী নেওয়াজ তপু বলেন, আইটির প্রতি ভালোবাসা থাকলে এই পেশায় এসে অবশ্যই ভালো কিছু করা সম্ভব। আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও সবসময় কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিলো। প্রোগ্রামিং করার সময় কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে হলেও সমাধান করার চেষ্টা করতাম।

ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা শাবহানাজ রশিদ দিয়া বলেন, নিজের আইডিয়া নিয়ে সবসময় বড়দের কাছে ছুটেছি। কিন্তু বড়দের অবহেলায় ভেঙ্গে পড়িনি। নিজেরা সেই আইডিয়া প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছি। আমাদের মেয়েরা নিজেদের আইটি কাজের ক্ষেত্রে দুর্বল ভাবেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ আইটি খাতে একজন মেয়ে সংসারের মত মাল্টি টাস্ক করা এবং কাজের সঙ্গে সঙ্গে ভাবতেও পারেন। তাই আইটি খাত নারীদের উপযুক্ত একটি জায়গা। ঘরে বসে আয় করার জন্যও আইটি নারীবান্ধব ভূমিকা পালন করে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, আইটি থেকে আমরা কেউ বিচ্ছিন্ন নই। আমাদের দেশের তরুণরাই এর মূল ধারক। আমি বিশ্বাস করি, এই তরুণদের হাত ধরে আমাদের প্রযুক্তি বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়বে।

বিডিজবসডটকমের সিইও একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, আগে আইটিকে ভালোবাসো, তারপর আইটি নিয়ে কাজ করো। সবসময় এমন কাজ করবে যা তুমি ছাড়াও অন্যদের উপকারে আসে। আইটি হচ্ছে পোর্টেবল ক্যারিয়ার। এখানে ভালো করলে তার মূল্যায়ন অবশ্যই পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) পরিচালক ও বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের আহ্বায়ক আরিফুল হাসান অপু বলেন, বেসিস সারাদেশে ৬০টিরও বেশি ‘বেসিস স্টুডেন্টস ফোরাম’ গঠন করেছে। আমরা আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে সারাদেশের সেই ৬০টি প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ আইটি প্রেমীদেরকে আইটি ক্যারিয়ার গঠনে একত্রিত করেছি। এখানে এসে তারা তাদের ভবিষ্যৎ আইটি পেশা সম্পর্কে জানতে পারছে। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের আইটি ক্যারিয়ার গঠনে বিশেষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে আমরা বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের প্রতিটি সদস্যকে বিভিন্ন আইটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। তাদের মধ্যে সম্পর্ক গঠনে আমরা বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কম্পিটিশনের আয়োজন করে থাকি। এছাড়াও বিশ্বমানের আইটি প্রফেশনাল ও উদ্যোক্তা গঠনে আমরা এই সকল তরুণদেরকে বেসিসের পক্ষ থেকে বিশেষ ছাড়ের মাধ্যমে তাদেরকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেম্বারশিপ সুবিধা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছি।

বেসিসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত থেকে আরো বক্তব্য দেন, বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান, ফেসবুক কর্মকর্তা আঁখি দাস, বিডি সাইকিলিস্টের ফাউন্ডার মোজাম্মেল হক, লেখক সাবিরুল ইসলাম প্রমুখ।

** ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ঘুরে গেলেন সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থী !
** ‘প্রোডাক্ট জীবনে মূল্যযোগের যোগ্যতা থাকতে হবে’

বাংলাদেশ সময়: ০৫২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।