ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা!

এ কে এম রিপন আনসারী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫
বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা! শান্তি আক্তার

গাজীপুর: ভালোবাসা দিবসে (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাল্যবিয়ে। তারপর আবার যৌতুক দিতে না পেরে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে, অপমানে আত্মহননের পথ বেছে নিলো তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শান্তি।



ভালোবাসা দিবসের মাত্র একদিন আগে ভালোবাসার মানুষ আলামিনের প্রতারণা সইতে পারেনি সে। সে কারণে নিজমনে অশান্তির আগুন জ্বেলে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলো শান্তি নামে পৃথিবীর এক কন্যাশিশু।

জানা গেল, ভালোবাসা দিবসে (১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইনস ডে, শনিবার) বিয়ের দিন নির্ধারণ করা হয়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শান্তি আক্তারের (১১)।

কিন্তু বিয়ের আগে প্রেমিক আলামিনকে (২৫) ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে না পারায় বিয়েটা ভেঙে যায়। এরপরই অপমানের কষ্টে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহনের পথ বেছে নেয় শান্তি।

বৃহস্পতিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতের কোনো এক সময় শান্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শান্তির বাবা আবুল খালেক বাংলানিউজকে জানান, আলামিন (২৫) তাদের বাড়ির পাশে ভাড়া থেকে স্যাটেলাইট ক্যাবলের (ডিশ) ব্যবসা করতো।

তিনি জানান, ৪/৫ মাস আগে শান্তির সঙ্গে আলামিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে আলামিনের সঙ্গে তার মেয়ে শান্তির বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তাদের বিয়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাতে আলামিন শান্তিকে জানায়, ৫০ হাজার টাকা যৌতুক না দিলে সে শান্তিকে বিয়ে করবে না। এরপর রাতেই আলামিনের উদ্দেশে শান্তি একটি চিঠি লেখে। চিঠি লেখার পর বৃহস্পতিবার রাতের যে কোনো এক সময় সে আত্মহত্যা করে।

চিঠিতে শান্তি লেখে-


                                           চিঠি
“প্রিয় আলা মিন।                                                          শ্রীপুর, গাজিপুর তাং ১৩-২-২০১৫ সন

আমি জানিনা যে আমাদের ভালোবাসা এ রকম হবে। তুমাকে তুমার মা অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে ৫০ হাজার টাকা পাবে। আর আমাকে বিয়ে করলে তুমি এক টাকাও পাবেনা।

তুমার মা এই বিয়ে কুনো দিনই মেনে নেবেনা তুমাদের বাড়িতে তুমার বিয়ে ঠিক আছে। আমি চায়না যে আমার জন্য তুমাদের অশান্তি হক।

তাই আমি জানি যে সব দুশ আমার আমি ভুল করেছি তুমাকে ভালোবেসে। যদি কোনো ভুল করে থাকি তবে খমা কর দিয়।

ইতি
তোমার ভালোবাসার মানুষ
শান্তি আক্তার”

এ চিঠি লেখার পর মনের ক্ষোভে, দুখে, কষ্টে, অপমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় শান্তি। ভালোবাসা দিবসের মাত্র একদিন আগে ভালোবাসার ইতি টেনে পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান জানান, ঘরের আঁড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে শান্তি আত্মহত্যা করেছে। পরে খবর পেয়ে শুক্রবার দুপুরে শান্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ সময় শান্তির মরদেহের পাশ থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামে শান্তিদের বাড়ি। সে স্থানীয় আবদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

এদিকে, শান্তির আত্মহত্যার খবর পেয়ে আলামিন পলাতক। তাকে আটকের জন্য পুলিশি অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই মজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।