নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন শীতলক্ষ্যা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপিসহ অন্যদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হচ্ছে। রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকাকে যানজটমুক্ত করতে সরকার এলিভেটেট এক্সপ্রেস ও মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্য রাস্তা ঘাট একান্তভাবে প্রয়োজন আর এ রাস্তা ঘাট উন্নত হলে মানুষের জীবনযাত্রা আরো সহজ হয়ে যায়। গণপরিবহন সহজ হয়। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীলতা পায় এবং দেশ এগিয়ে যায়। আমরা সরকার গঠনের পর থেকে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভূলতা ৪ লাইন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার ও নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার সংযোগকারী তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হোসনে আরা বাবলী, জেলা প্রশাসক আবদুল হাই, জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিউদ্দিন প্রমুখ।
এছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের মানুষদের মধ্যে আনন্দ দেখা গেছে। এ স্থানটির কারণে পদ্মাসেতু হয়ে মাওয়া হয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে চট্রগ্রাম ও সিলেটে যাতায়াতেরও সুবিধা হবে।
বিগত বিএনপি সরকারের শেষের দিকে সেতু নির্মাণের কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই ও ফান্ড জোগাড় না করেই ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শহরের নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও সেটা ছিল নিছক নির্বাচনী আইওয়াশ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দরের মদনগঞ্জে সমাবেশ করে দ্রুত সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। নানা প্রতিকূলতার পর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের সৈয়দপুর ও বন্দরের মদনগঞ্জ এলাকা দিয়ে সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় একনেক।
শহর ও বন্দর এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসন। এ আসনের প্রয়াত তিনবারের এমপি নাসিম ওসমানের স্বপ্ন ছিল শীতলক্ষ্যা সেতু। গত বছরের ৩০ এপ্রিল তিনি ভারতে আকস্মিক মারা গেলে ২৬ জুন উপ-নির্বাচনে তারই ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান নির্বাচিত হন। পরে তিনি এ সেতুর ব্যাপারে বেশ আটঘাঁট বেধে মাঠে নামেন। সেতু না হলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকেও রোডমার্চের ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলনের পথে যেতে হয়নি সেলিম ওসমান কিংবা নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩শ’ ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকার সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১২শ’ ৯০ মিটার। সদরের সৈয়দপুর প্রান্ত থেকে মদনগঞ্জ প্রান্তে এটি শেষ হবে। কাজ শুরু হবে আগামী জুলাই মাসে। নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের জুন মাসে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ভূলতায় চারলেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২শ’ ৩৮ মিটার ও প্রস্থ ১৭ দশমিক ২০ মিটার। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ অধিদফতর। প্রকল্পটি জরিপ ও নকশা প্রনয়ণ সম্পন্ন করে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫