ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠিত হবে কি-না, সে বিষয়ে আদেশের দিন পিছিয়ে আগামী ২ মার্চ পুনর্নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অভিযোগ গঠনের আদেশের দিন ধার্য ছিল।
এ সময় প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী এবং আসামি ওবায়দুল হক তাহেরের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন ও আতাউর রহমান ননীর পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী টিএইচ তামিম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৮ জানুয়ারি ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহসান বাদল। অন্যদিকে ২৬ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে আসামিপক্ষে শুনানি করেন ননীর আইনজীবী শাহ মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন ও তাহেরের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন।
গত বছরের ৫ নভেম্বর একটি মামলার আসামি ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মোট ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে ৬৩ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা এবং প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
মামলাটি তদন্ত করেছেন তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর। গত বছরের ৬ জুন থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তদন্ত চালিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
৯ নভেম্বর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় প্রসিকিউশনে। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করেন প্রসিকিউশন।
গত ১২ আগস্ট ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর পর পরই নেত্রকোনা পৌর শহর থেকে মোক্তারপাড়া এলাকার সাবেক ফুটবলার আতাউর রহমান ননী ও তেরীবাজারের ব্যবসায়ী ওবায়দুল হক তাহেরকে গ্রেফতার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। পরে গ্রেফতারকৃত দু’জনকে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
১৩ আগস্ট ননী ও তাহেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো ও তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৫ আগস্ট প্রসিকিউশনের আবেদনক্রমে ননী ও তাহেরকে একদিন করে সেফহোমে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত দু’জনসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়েছে, ওবায়েদুল হক তাহের (৫৫) নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার ভোগাপাড়ার শুনই এলাকার মৃত মঞ্জুরুল হকের ছেলে। তিনি নেত্রকোনা পৌর শহরের তেরীবাজারে থেকে ব্যবসা করেন। অন্যদিকে আতাউর রহমান ননী (৫৮) একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা এলাকার মৃত আহছান আলী ওরফে আছান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছেলে। ননী পৌর শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং একজন সাবেক ফুটবলার।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা ‘পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা’র বিশ্বাস থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন।
আসামি তাহের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হলে অপর আসামি ননীসহ আরো অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর শহরের মোক্তারপাড়ায় মলয় বিহারী বিশ্বাসের বাড়ি দখল রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা।
তারা ১৯৭১ সালে নেত্রকোনা জেলার সদর এলাকা ও বারোহাট্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন।
তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেবেন রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫