ঢাকা: চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার ৭২ ঘণ্টার হরতাল, পাশাপাশি চলছে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। এ অবস্থাকে পাত্তা না দিয়ে রাজধানীতে হরদম চলছে যানবাহন, দিনভর কর্মব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরছেন রাজধানী বাসী।
শাহবাগ থেকে মোহাম্মদপুর যাবেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম ও তার বন্ধু সামিউর রহমান। এমনিতে রাত গড়িয়ে যাচ্ছে, দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে বাস পেলেন, তবে বাসে উঠে দাঁড়ানোর মতো সামান্য জায়গা পাচ্ছিলেন না তারা। পরে ঠাসাঠাসি করে কোনোভাবে দাঁড়িয়েছেন দুই বন্ধু।
একদিকে বাসের ভেতরে লোকজনের ভীড়, অপরদিকে অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই যানজট। এক পর্যায়ে সামিউর বলে উঠলেন, হরতাল-অবরোধেই এ অবস্থা! এসবের কোনো মানে নেই।
আরেক বন্ধু আশরাফুল বললেন, হরতাল-অবরোধ মানেই হলো কোনো গাড়ি চলবে না। রাস্তাঘাট থাকবে ফাঁকা। চলাফেরায় থাকবে আরাম-আয়েশ, থাকবে না কোনো যানজট। কিন্তু একি অবস্থা, হরতাল-অবরোধের বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই। উল্টো যানজট লেগে রয়েছে আরো বেশি।
যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও চলাচলরত যাত্রীরা রয়েছেন আতঙ্কে। বাস যাত্রীরা পেট্রোল বোমায় আর পথচারীরা থাকছেন ককটেল হামলার দুশ্চিন্তায়।
বাস যাত্রী আরিফ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমনই হোক মানুষের জীবন প্রবাহ থেমে থাকে না। অন্তত পেটের দায়ে বের হতে হয় কর্মস্থলের উদ্দেশে। তবে সকাল বেলায় বাসা থেকে বের হলে মনে হয় যেন এই বুঝি মরণের রাস্তায় দিকে জীবনের শেষ বারের মতো বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানের মুখ দেখে বের হচ্ছি। সন্ধ্যায় ফিরছি ধানমন্ডির বাসায়, কিন্তু এখনো অর্ধেক পথ বাকি। ছোট ছোট সন্তানারা আর পরিবারের লোকজন আমার অপেক্ষায় রয়েছে। জানি না নিরাপদে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবো কিনা।
আরিফ হাসান বলেন, হাত জোড় করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, যত দ্রুত সম্ভব একটি সমঝোতায় আসার জন্য। যেকোনো উপায়ে আমরা সমাধান চাই, এভাবে আর কতদিন চলবে?
বাসে থাকা আরেক যাত্রী কলেজ শিক্ষক শহিদ উল্লাহ বলেন, দু’টি দলকে অন্তত নিজের স্বার্থের জন্য যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতায় আসতে হবে। অন্যথায় তৃতীয় একটি পক্ষ এসে ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, গণতন্ত্র যদি জনগণের জন্য হয় তাহলে এই গণতন্ত্র কি জনগনের নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে পারছে? এ প্রশ্নটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই রইলো।
যারাই ক্ষমতায় আসেন বা ক্ষমতায় থাকেন দয়া করে স্বাধীন রাষ্ট্রে আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। পেট্রোল বোমা মারা, ককটেল হামলা বন্ধ করুন, জবাবে বন্ধুকযুদ্ধের নামে যদি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় তাহলে এটিও বন্ধ করুন। যারা এটি করছেন তাদের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে, মুখ থুবড়ে পড়বে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা।
এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ ওই রাজনৈতিক দল থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিবে এটাই স্বাভাবিক। উন্নয়ন-প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন হয়েছে -বিষয়টি রাজনৈতিক নেতাদের মাথায় রাখা উচিৎ বলে মনে করেন শিক্ষক শহিদ উল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫