সিলেট: ‘গাড়ি চলে না, চলে না রে/ পার্সগুলো ক্ষয় হয়েছে/ ইঞ্জিনে ময়লা ধরেছে’ বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমের দেহতত্ত্বের গানটি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সড়কের বেলায়ও প্রযোজ্য বটে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানব দেহ যেমন ক্ষয় হতে শুরু করে, তেমনি এ সড়কে একবার কোনো যানবাহন চলাচল করলে তার ঠিকানা হয় ওয়ার্কশপে।
সিলেট তথা সারা দেশের সঙ্গে পাথরের রাজ্য বলে খ্যাত কোম্পানীগঞ্জবাসীর চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। সংস্কারের অভাবে সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ এ উপজেলায় অবস্থিত। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘেরা বিছনাকান্দি সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাটে অবস্থিত হলেও যেতে হয় এ পথ মাড়িয়ে।
কোয়ারি থেকে আহরিত পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অট্টালিকা, সেতু ও সড়ক-মহাসড়কে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। সরকারও এখান থেকে পাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।
অথচ সংস্কারের নামে বছরের পর বছর সড়ক বিভাগ লিমিট টেন্ডার মেথড (এলটিএম) ও ডিরেক্ট প্রকিওর মেথড (ডিপিএম) শতকোটি টাকা হরিলুট হয়েছে অংসখ্যবার।
২০১২-১৩ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্তু কাজ হয়নি সিকিআনাও।
২০১৪ সালে এ সড়কে ভেঙে পড়া ধলাই সেতু পরিদর্শনে গিয়ে সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ককে ‘ক্যান্সার আক্রান্ত’ বলে আখ্যায়িত করে অচিরেই সংস্কারের আশ্বাস দেন। কিন্তু এ কথার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি আজও।
সিলেট থেকে ৩১ কিলোমিটারের এ আঞ্চলিক সড়কটির সংস্কার কাজের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন কোম্পানীগঞ্জবাসী। সম্প্রতি এ দাবিতে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সড়ক সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক নাসরিন জাহান ফাতেমা বাংলানিউজকে জানান, নয় বছর ধরে এ সড়কের বেহাল দশা।
বিশ্বের কোথাও এ ধরনের সড়ক আছে কিনা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, রোগীদের নিয়ে যাওয়া দূরে থাক, সুস্থ মানুষের পক্ষেও যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে স্থানীয় জনগণ সড়কটিকে ‘জাহান্নামের রাস্তা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পরও দীর্ঘ নয় বছর ধরে রাস্তাটি সংস্কারের নামে শতকোটি টাকা পুকুর চুরি হয়েছে।
২০১৪ সালে সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী রাস্তা পরিদর্শনে গিয়ে এ সড়কের জন্য ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে উপজেলার মানুষের মনে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি রাস্তাটি মেরামতের দাবিতে উপজেলার সর্বস্তরের লোকজন আন্দোলনে নেমেছেন।
এদিকে, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ ৩১ কিলোমিটার সড়কের ৪শ’ ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্প দীর্ঘদিন থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি ছিল। বৃহস্পতিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রি-একনেক কমিটির (পিইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ৪শ’ ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পে একনেকের বৈঠকে উপস্থাপনের সিদ্ধান্তে একমত হন সংশ্লিষ্টরা।
সভা শেষে সিলেট সড়ক ও জনপথের (সওজ) তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী চন্দন কুমার বসাক বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কের জন্য ৪শ’ ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০১৪ সালের শেষের দিকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সভায় নীতিগতভাবে সবাই প্রকল্পটি একনেকে উত্থাপনের জন্য একমত হয়েছেন।
তবে ২০১২-১৩ সালে এ সড়কে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণের হিসাব দিতে পারেননি তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪