ঢাকা: রোববার রাতে জিহাদের মা জেনেছেন, তার ছেলের প্রাণহানির ক্ষতিপূরণ হতে পারে ৩০ লাখ টাকা। এ নিয়ে করা রিটের ওপর রুল জারি হয়েছে।
অত্যন্ত দরিদ্র সংসারে এই ৩০ লাখ টাকার খবর বাড়িয়েছে পুত্রশোকের কাতরতা।
রোববার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে গিয়ে দেখা হয় জিহাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে।
মা খাদিজা এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। ছেলের মৃত্যুতে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনায় তার মনে পড়ে যায় সামান্য খাবারের জন্য শিশু জিহাদের আকুতির কথা।
‘দোকান থিকা কিছু কিন্যা খাওয়ার লিগা কইতো, মা ট্যাকা দাও দুকানে যামু। ৫ ট্যাকা নোট রাখতে হইতো ‘আমার বাবার জন্য’। ১০ টাকা ২০ টাকার নোট দিলে নিতো না, হেয় ৫ ট্যাকার নোটই নিতো। এহন আর ৫ ট্যাকার নোট কেউ চায় না,’ কণ্ঠে আহাজারি ঝরে খাদিজার।
সারাদিন দুষ্টামি করতো, আর কইতো, মা ভুক (খিদা) লাগছে, আমি মজা খামু। আমার বুকটা খালি কইরা গেলো আমার বাবা। এহন (এখন) আর কেউ কয় না ‘মা আমার ভুক লাগছে’, জিহাদের কথা বলতে বলতে আকুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন খাদিজা খাতুন।
‘আমার পোলারে আমি ৫ ট্যাহা দিতে চাই, ত্রিশ লাখে কি হইবো রে ভাই,’ বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
জিহাদের মৃত্যুশোকে এখনও অসুস্থ খাদিজা খাতুন। শ্রবণশক্তিও কমে গেছে।
আশে-পাশের প্রতিবেশিরা জানায়, জিহাদ অনেক আদরের ছিলো এখানকার সবার কাছেই। ও সবার সঙ্গে মিশতো, কথা বলতো। সারাদিন খেলাধুলা আর দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখতো।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর শাজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপের ভেতর পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে জিহাদকে উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর ২৮ ডিসেম্বর জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে চিল্ড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৫ ফেব্রুয়ারি (রোববার) দুপুরে জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ কেনো দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন।
হাইকোর্টের এই রুল সম্পর্কে জিহাদের পরিবার প্রথমে কিছুই জানতো না। প্রথমে লোকমুখে শোনেন ; এরপর গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় খবরটা। জিহাদের বাবা নাসির পরে স্ত্রী খাদিজাকে গিয়ে জানান খবরটা।
‘আমার পোলা মারা যাওয়ার পরে শেষবারের মত লাশটা দেখতে পারি নাই। এইডা যে একজন বাবার কত বড় কষ্ট, তা বলে বোঝাতে পারবো না’ কষ্টের বোঝা বুকে নিয়ে কথাগুলো বললেন মো. নাসির ফকির।
তিনি বলেন, আমার পোলা পাইপের ভিতরে পইড়া গেছে, আর পুলিশ আমারে থানায় নিয়ে জেরা করে, নানা ভয় দেখায়।
রিট আবেদনে জিহাদের বাবাকে ১২ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়।
নাসির অভিযোগ করেন, জিহাদের এই মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী আসামি ঠিকাদার আব্দুল সালামকে এখনো গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। কিন্তু আসামি এখন নাকি জামিনে ঘুরছে। সালামের জামিনের খবর আমাকে দেন এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এস আই জাফর আহমেদ। তারা আসামিকে গ্রেপ্তার করে নাই। আসামি জামিনে ঘুরছে।
ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবির পাশাপাশি আসামিদের বিচারও দাবি করেন নাসির ফকির।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫