ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আদালত অবমাননা

তাজুল ও জামায়াত-শিবির নেতাদের বিষয়ে আদেশ ৩ মার্চ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫
তাজুল ও জামায়াত-শিবির নেতাদের বিষয়ে আদেশ ৩ মার্চ

ঢাকা: ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা ও বিরুপ মন্তব্য করায় জামায়াত নেতাদের ‍আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামসহ তিন জামায়াত নেতা ও দুই শিবির নেতার আদালত অবমাননার বিষয়ে আগামী ৩ মার্চ পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতারা হচ্ছেন- জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান এবং ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান।



সোমবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জামায়াত-শিবির নেতাকে দেওয়া কারণ দর্শাও (শো’কজ) নোটিশের জবাব দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে তাদের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম ৮ সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানান। এ আবেদন নামঞ্জুর করে আগামী ৩ মার্চ পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের একই রায় নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগের জবাবে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন জামায়াত নেতাদের ‍আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। অন্যদিকে জামায়াত-শিবির নেতাদের শো’কজ নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ১২ জানুয়ারি ওই পাঁচ জামায়াত-শিবির নেতা এবং অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। নোটিশে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চেয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ২৮ জানুয়ারি তাদেরকে সশরীরে হাজির হয়ে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

২৮ জানুয়ারি অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে জামায়াত-শিবির নেতাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ব্যাখ্যা দিতে সময়ের আবেদন জানান।

গত ১ জানুয়ারি সংগঠন হিসেবে জামায়াত এবং ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেছিলেন প্রসিকিউশন। ৫ জানুয়ারি এ অভিযোগের শুনানি নিয়ে ১২ জানুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ১২ জানুয়ারির আদেশে জামায়াত বাদে বাকিদেরকে শো’কজ করেন ট্রাইব্যুনাল।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের প্রতিবাদে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি দু’দিনের হরতাল ডাকে জামায়াত। বিবৃতিতে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নানা বিরুপ কথা বলেন জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পদে থাকা নেতারা।

অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে তা এক ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলেও মন্তব্য করেন তাজুল।

আজহারের এই আইনজীবী বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ট্রেন থেকে আজহারকে নামতে যে তিনজন দেখেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ দেখেছেন ৬ কিলোমিটার দূর থেকে, কেউ ৩ কিলোমিটার ও আবার কেউ দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে। এসব সাক্ষ্যের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলে আমরা মনে করি।

অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, যেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক কাগজপত্র যদি ডাস্টবিনে ফেলা হতো তাতে সুবিচার হতো।
 
এসব সাক্ষ্য-প্রমাণে মৃত্যুদণ্ড হওয়া দূরের কথা, এসব অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনের জরিমানা হওয়ার দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসব অভিযোগে ১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ওই সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সীমন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, তাপস কান্তি বল, রেজিয়া সুলতানা চমন।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের রায়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। আজহারের বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে রায়ে প্রমাণিত হয়েছে পাঁচটি অভিযোগ। এর মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং দু’টিতে ২৫ ও ৫ বছর করে আরও ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির(উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়েছে রায়ে। প্রমাণিত না হওয়া বাকি একটি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।