ঢাকা: আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজার দখল করে নিচ্ছে। অন্যদিকে পরিবহন ব্যবস্থার সনাতন পদ্ধতির কারণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে না।
ডাক বিভাগ জানায়, বর্তমানে সারা বিশ্বে পার্সেল ও লজিস্টিক সার্ভিসের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কিন্তু ডাক অধিদফতরের নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাহকদের পার্সেল ও লজিস্টিক সার্ভিস যথাযথভাবে দিতে পারছে না। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যাতে স্বল্প খরচে মানুষ উন্নত মানের সেবা পায়।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারেও কমেনি ডাক বিভাগের কার্যক্রম। ডাক অধিদফতর শুধুমাত্র ঢাকা-রাজশাহী, খুলনা-বরিশাল এবং খুলনা-সাতক্ষীরা এই তিনটি পথে তিনটি যানবাহনের মাধ্যমে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় ডাক পরিবহন করে।
এছাড়া রেলের মাধ্যমে চার হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার, স্টিমারের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৯৮ কিলোমিটার এবং মেইল-মোটর চুক্তির মাধ্যমে বেসরকারি পরিবহনে ১৮ হাজার ২৬৬ কিলোমিটার পথে দৈনিক ডাক পরিবহন করা হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছ থেকে উন্নত মানের সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত মাশুল দিয়ে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের পণ্য পরিবহন করতে হয়। তবে আমরা আমাদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ডাক বিভাগে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাবো। আমাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবো। ডাক বিভাগে পণ্য পরিবহনের জন্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করবো।
তিনি বলেন, নতুন কিছু পরিবহন, কাভার্ড ভ্যান ও নগদ অর্থ পরিবহনের জন্য ক্যাশ ওয়াগন কেনা হবে। যাতে করে গ্রাহকরা আমাদের প্রতি আবারও বিশ্বাস ফিরে পান।
ডাক বিভাগ জানায়, ডাক অধিদফতর ১১৮টি যানবাহন ক্রয় করবে। এর মধ্যে পাঁচ টনি ১১টি কাভার্ড ভ্যান, তিন টনি ৩০টি কাভার্ড ভ্যান, দেড় টনি ২০টি কাভার্ড ভ্যান, এক টনি ১০টি কাভার্ড ভ্যান এবং নয়টি পিকআপ। অর্থাৎ মোট ৮০টি গাড়ির মাধ্যমে ৬৪টি জেলা শহর, ২০০টি উপজেলায় ৩০০টি সাব পোস্ট অফিস ও এক হাজার শাখা ডাকঘরে ডাক পরিবহন করা হবে।
অপরদিকে ৩৬টি মেইল অ্যান্ড সটিং অফিস সংযুক্ত করে ডাক পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। এছাড়া ৩৫টি ক্যাশ ওয়াগন দিয়ে নগদ অর্থ পরিবহন করা হবে। সাত টনি তিনটি কাভার্ড ভ্যান দিয়ে জেলা সিভিল ট্রেজারিতে রাজস্ব স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হবে। ডাক বিভাগ ঢেলে সাজানোর জন্য প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ডাক অধিদফতর পুরো টাকা খরচ করবে।
ডাক অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ডাক বিভাগের পার্সেল, চিঠিপত্র বিতরণ প্রভৃতি সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্দিষ্ট মান রয়েছে। যা সময় দিয়ে নির্ধারিত হয়। পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, ভুটানসহ অন্য দেশগুলোর ডাক সেবার মান যথাযতভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে পারছে না ডাক বিভাগ। ফলে দেশি- বিদেশি গ্রাহকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ডাক বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন. ডাক অধিদফতরের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী ও আধুনিক হলে গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে শহরের জনগণের মধ্যে পণ্য পরিবহনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১২৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫