ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মাইক্রোবাস বদলে অ্যাম্বুলেন্স!

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫
মাইক্রোবাস বদলে অ্যাম্বুলেন্স! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: অবরোধ-হরতালে চরম সংকটে রয়েছেন মাইক্রোবাসের মালিক-শ্রমিকরা। বড় গাড়ি রাস্তায় বের হলেও ছোট গাড়ি বের করতে সাহস পাচ্ছেন না মালিকরা।

তবে বাধা নেই অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে। অবরোধকারীরাও অ্যাম্বুলেন্স দেখলে পথরোধ করে না। তাই পেটের দায়ে মাইক্রোবাসে স্টিকার, লাল বাতি ও জরুরি সাইরেন লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে ফেলছেন মালিক-চালকরা।

যাত্রীরাও অনেকটা অসহায়। প্রয়োজনের তাগিদে তাদের বের হতে হচ্ছে রাস্তায়। এই সুযোগে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া এসব যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন অ্যাম্বুলেন্স বেশধারী মাইক্রোবাসগুলোর মালিক-চালকপক্ষ।

আর জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়েই বেশি টাকা খরচ করে এসব রূপান্তরিত অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে দূর-দূরান্ত থেকে রোগী ও তাদের স্বজনদের পরিবহনের জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।    
 
সোমবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনের মাইক্রোস্ট্যান্ডে কথা হয় জাহেদুল ইসলামের সঙ্গে।

জাহেদুলের বাড়ি নাটোরের বড় হরিশপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে। গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙে গেছে তার ছোট ভাই শহীদুলের। হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু ভাইয়ের পায়ের প্লাস্টার নিয়ে অন্য কোনো যানবাহনে চড়লে হরতাল-অবরোধকারীদের সহিংসতার ভয়। তাই মাইক্রোস্ট্যান্ডে রূপান্তরিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করছিলেন সবাইকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে।

জাহেদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স শহরের বাইরে যায় না। এজন্য বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। তবে সাধারণ সময়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা হলেও, এখন তার বাড়ি পর্যন্ত যেতে ছয় হাজার টাকা ভাড়া দাবি করছেন চালক। স্ট্যান্ডে থাকা এক চালকের সঙ্গে কথা হলে, অন্য কোনো চালক আর যেতে চায় না। তাই সবকিছু বিবেচনায় দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়ায় বাড়ি যেতে হচ্ছে।

নওগাঁর নিয়ামতপুরের শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের জুলুপাড়া গ্রামের কাশেম আলী জানান, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মা অসুস্থ হয়ে ভর্তি ছিলেন। তাকেসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স (রূপান্তরিত) ভাড়া করা হয়েছে। ককটেল বা পেট্রোলবোমার হাত থেকে বাঁচতে এছাড়া বিকল্প নেই। চালকরা রোগীদের সেবা না দিয়ে উল্টো জিম্মি করে অবরোধের মধ্যে ফায়দা লুটছেন। বেশি ভাড়ার আশায় স্টিকার লাগিয়ে সব মাইক্রোবাসই এখন অ্যাম্বুলেন্স হয়ে যাচ্ছে।

এতে কিছু যাত্রীর সুবিধা হলেও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মাইক্রোবাসচালক শফিকুল জানান, টানা অবরোধে সবসময় ভাড়া পাওয়া যায় না। এক মাস ধরে তিনি বসেছিলেন। কোনো ভাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই অ্যাম্বুলেন্স লেখা স্টিকার লাগিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এতে মহাসড়কে কোনো সমস্যা হয় না। আর ভাঙচুর ও পেট্রোলবোমার আশঙ্কাও কম থাকে।

তবে বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ওই মাইক্রোস্ট্যান্ডের নেতা রাব্বুল জানান, টানা অবরোধ-হরতালে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের স্ট্যান্ডে প্রায় একশ’ চালক রয়েছেন। অবরোধ ও হরতালকারীদের হাত থেকে বাঁচতেই মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স করা হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখন তারা রোগীসহ সাধারণ মানুষকে পরিবহন সেবা দিয়ে আসছেন। তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভাড়ার টাকার পরিমাণ সামান্য বেড়েছে।

তবে বেশি বাড়া নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানান তিনি।

ভাঙচুর, নাশকতার ঝুঁকি নিয়ে একটু ভাড়া বেশি চাইলে তা দোষের নয় বলেও দাবি করেন মাইক্রোচালকদের এই নেতা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।