ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘কুলে কপাল ফাটছে চাষির’

বেলাল হোসেন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
‘কুলে কপাল ফাটছে চাষির’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুর (বগুড়া): ডালপালাগুলো ফলের ভার সইতে পারছে না। বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় গাছের বোটাও ফলগুলো ধরে রাখতে পারছে না।

টপ টপ শব্দ তুলে ফলগুলো বোটা থেকে মাটিতে খসে পড়ছে। সময় মতো সেগুলো সংরক্ষণ করতে না পারায় মাটিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। বাজারে নিয়ে গেলেও দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

আবার লোকসানে বিক্রি করতে চাইলেও অনেক সময় ক্রেতা মিলছে না। ফলে অনেক চাষির ফল বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা বাজারজাত করার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না।

২০দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ আর হরতাল কুলচাষিদের পাগল করে তুলেছে। চোখের সামনেই সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করতে পারছেন না। কেবলই তারা বুক চাপড়ে মরছেন। হা-হুতাশ করছেন, আর চোখের পানি ফেলছেন। ফলে লাভের আশায় কেনা সেই ‘কুলে কপাল ফাটছে চাষির’।

কেননা তাদের মতো গরীবদের নিয়ে রাজনীতিবিদদের ভাবার সময় কই। অথচ তাদের নাম ভাঙিয়েই দেশে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন সব রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। যে রাজনীতি তাদের মত চাষিদের সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। এরপরও তারা তাদের মতো জনগণকে ঢাল বানিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার মরণ-পণ লড়াইয়ে মেতে উঠেছেন।    

সম্প্রতি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ও গাড়ীদহ ইউনিয়নে গিয়ে একাধিক কুলচাষির সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খামারকান্দির আব্দুল মোমিন, রুবেল মিয়া, আব্দুল আলীম, মিথুন মিয়া, ইনছান আলীসহ একাধিক কুলচাষি বাংলানিউজকে জানান, এক বিঘা জমির বাগানে প্রায় ১২০-১৬০টি বাউকুলের গাছ লাগানো যায়। এতে প্রায় ১৫-২০হাজার টাকা ব্যয় হয়। এবছর ফলন বাম্পার হওয়ায় প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১০কেজি হারে কুল আসছে। সে হিসেবে এক বিঘার একটি বাগান থেকে ৩০-৪০ মণ কুল সংগ্রহ করা যায়।  

তবে টানা অবরোধ-হরতালের কারণে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে কুল ব্যবসায়ীদের। জুয়েল রানা, আব্দুল বারী, মজনু মিয়া, সাজ্জাদ আলম বাচ্চু, ফুল মিয়াসহ একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, বিগত বছরের হিসেব অনুযায়ী এবার তারা প্রতিটি বাগান মালিককে অগ্রিম ৭০-৮০হাজার টাকা দিয়ে এক বিঘার একটি করে বাগান কিনেছেন।

গেল বছরের হিসাবে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক থাকলে এক বিঘার একটি বাগান হতে কমপক্ষে এক লাখ থেকে ১ লাখ ২০হাজার টাকার কুল বিক্রি করা সম্ভব ছিল। মনুষ্য সৃষ্টি এ দুর্যোগ শুরু হওয়ার আগের দিনেও প্রতিকেজি কুল ৮০-১০০টাকা হিসেবে প্রতিমণ ৩২০০-৪০০০টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

কিন্তু বিধি বাম। টানা অবরোধ-হরতালের কারণে দেশর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা আসছেন না। এছাড়া স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা বাজারেও ক্রেতা নেই। ফলে বাজার ব্যাপকভাবে পড়ে গেছে। আগের সেই কুল বর্তমানে তারা প্রতিমণ ১০০০-১২০০টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে তাদের লাভ তো দূরের কথা, মূলধনও তুলতে পারছেন না।

বরং এ অবস্থা আর কিছু দিন অব্যাহত থাকলে কুল ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। তারা এখন চোখে সরষে ফুল দেখছেন। গাছ থেকে কুল পেড়ে জমিতে বিছিয়ে মলিন মুখে বাগানেই ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন। তাদের সেই অপেক্ষার পালা কবে শেষ হবে -এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব অন্যদের মতো তাদেরও জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।