ঢাকা: টানা অবরোধ-হরতালে সহিংসতায় নিহতদের স্বজন ও আহতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন দেশের ৫০ চিত্রশিল্পী।
রঙ ও তুলির আঁচড়ে চলমান পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস ও মানুষের হাহাকার চিত্রকর্মে তুলে ধরে এর প্রতিবাদ ও নৃশংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পীরা।
প্রদর্শনীতে নন্দিত চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, রফিকুন্নবী, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, সমরেশ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, হামিদুজ্জামান, নাঈমা হকসহ ৫০ চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্ম রয়েছে।
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য বা সহিংস উপায়ে নয় বরং রঙ-তুলির মাধ্যমে সহিংসতার প্রতিবাদ করেছেন তারা। আর ৫০ চিত্রশিল্পীর আঁকা এসব চিত্রকর্ম বিক্রির অর্থ পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের চিকিৎসার্থে খরচ করা হবে।
এসব চিত্রকর্মের মাধ্যমে মানুষ হত্যার বিভৎসতার পাশাপাশি বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। ‘মানবতার পক্ষে, সহিংসতার বিরুদ্ধে চিত্রকর্ম’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি (৩ দিন) রাজধানীর গ্যালারি চিত্রকে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
‘গ্যালারি চিত্রক’ ও ‘বৃত্তান্ত ৭১’ যৌথভাবে ব্যতিক্রমী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে যা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।
উদ্বোধনের পর সেখানে চিত্রশিল্পীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ সময় শিল্পীরা আগত দর্শণার্থীদের কাছে তাদের আঁকা চিত্রকর্ম বিষয়ে বর্ণনা দেন।
প্রদর্শনীতে শিল্পীরা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবিরোধীচক্র ও তাদের দোসররা অতীতের চেয়ে বেশি পৈশাচিক হয়ে উঠেছে। তাদের ভয়ঙ্কর পেট্রোল বোমার আঘাতে ঝলসে যাচ্ছে নিরীহ, খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষসহ শিশুরাও।
তারা বলেন, প্রতিটি দগ্ধ মানুষই পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। তাই দগ্ধ, নিরীহ এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ আয়োজনের উদ্যোক্তা চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, প্রদর্শনীর মাধ্যমে পাওয়া অর্থ পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবার ও আহতদের দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এ প্রদর্শনী থেকে যা উঠে আসবে তাতে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার কম হবে না। এর সব অর্থই পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের দেওয়া হবে।
মনিরুজ্জামান বলেন, দগ্ধ ও তাদের আত্মীয়দের একটাই কথা, সাহায্য নয়। এমন নৃশংসতা থামান! এমন করুন আর্তনাদে চিত্রশিল্পীরা বসে থাকতে পারে না।
চিত্রকর্ম কিনতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দগ্ধদের সহযোগিতায় এসব চিত্রকর্ম অর্ধেক বা সম্মানজনক মূল্যে দিয়ে দেওয়া হবে।
শিল্পীরা রাজনীতি করে না তবে রাজনীতি সচেতন। শিল্পীসহ সবাই সোচ্চার হলে এমন বিভৎসতা থামতে বাধ্য বলে মনে করেন গুণী এ শিল্পী।
দগ্ধদের উপহাস নয় স্বজন হিসেবে পাশে দাঁড়াতে এমন আয়োজন জানিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, একজন পোড়া মানুষকে এই সামান্য অর্থ দেওয়াটাকে উপহাস মনে হলেও তাদের পাশে দাঁড়ালে তারা শক্তি পাবে। ভাববে, আমাদের স্বজন পাশে আছে, দেশ আমায় নিয়ে ভাবছে।
এখান থেকে তোলা অর্থ ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫