ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বান কি মুনের চিঠি রুটিন বিষয়

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
বান কি মুনের চিঠি রুটিন বিষয় শেখ হাসিনা, বান কি মুন ও খালেদা জিয়া

ঢাকা: জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের চিঠি ঢাকায় এসেছে গত সপ্তাহের শেষভাগে। তবে সে চিঠি তিনি লিখেছেন গত ৩০ জানুয়ারি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি একটি চিঠি দিয়েছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় থেকে সংবাদমাধ্যমগুলোকেও এমন একটি চিঠির কথা জানানো হয়েছে। আর সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতেই উল্লেখ রয়েছে খালেদা জিয়াকে পাঠানো হবে একটি চিঠি।

প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বলেছেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। আর এ অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট আন্দোলনের নামে যে জ্বাল‍াও পোড়াও, হত্যা, ধ্বংস হচ্ছে তাতে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন।

জাতিসংঘ মহাসচিব চিঠিতে বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর তার আস্থা রয়েছে। আর সে কারণেই তিনি মনে করেন, তার পক্ষেই এ সঙ্কটের সমাধানের পথ তৈরি করা সম্ভব।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া চিঠিতেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে চিঠি দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এতে তিনি বলেছেন, তিনি খালেদা জিয়াকে আহ্বান জানাবেন যেনো তিনি একটু নমনীয় হয়ে, একটি গঠণমূলক সংলাপের পথে এগিয়ে আসেন এবং এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে তার দল ও শরিকরা বিরত থাকে।

এই চিঠিতে ‍জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশের বিরাজমান সঙ্কটের বিষয়টি গভীরভাবে দেখা এবং এর সমাধানের করণীয় নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছেন বলেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব তার চিঠিতে সংলাপের কথা বললেও মূলত বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধের ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন। সংলাপের আহ্বানটি গতানুগতিক উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, এমন আহ্বান জাতিসংঘের অনেকটা রোটিন কাজ।

জাতিসংঘ মহাসচিবের এই আহ্বান কূটনীতিকভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি চিঠি দুটি পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্য থেকেই বুঝে নেওয়া যায়। যে চিঠি ৩০ জানুয়ারি তারিখে লেখা সেটি হস্তান্তর হয়েছে ১৫ দিন পর।

এছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখতে চান বলেই তার এই আহ্বান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর তার আস্থা রয়েছে বলেই তাকে তিনি এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে কোনও সুপারিশ হলে সে অনুযায়ী মহাসচিব যদি কোনও আহ্বান জানান, সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তা মানতে বাধ্য থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ কোনও মতামত বা সুপারিশ দেয়নি বলেই নিশ্চিত করেন ড. একে আবদুল মোমেন।

তিনি আরও বলেন, এই চিঠি হস্তান্তরের পরেও অন্তত তিন দফা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। এসব সময়ে সংলাপ বা এ ধরনের কোনও প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেননি মহাসচিব।

তবে এরই মধ্যে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ মিশনে গিয়ে ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনিও আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসচিবের দেওয়া দায়িত্বের কথা জানিয়েছেন তাকে।

এসময় বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কথা হয়।

ড. মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি অস্কার তারানকোকে জানিযেছি দেশে বিএনপি-জামায়াত জোট এখন যে সন্ত্রাস, হত্যা, আগুনের রাজনীতি শুরু করেছে তা স্রেফ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সামিল। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়।

তারানকো অবশ্য ড. মোমেনকে বলেছেন, তিনি মনে করেন বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা আটক ও কোনঠাসা থাকার কারণেই খালেদা জিয়াকে ভালো পরামর্শ দেওয়ার কেউ নেই। আর সে কারণেই এ ধরণের সন্ত্রাসের পথে এগুচ্ছে দল ও জোট।
 
ড. মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি তারানকোকে জানিয়েছি, বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা হত্যা, অগ্নিসংযোগের মামলায় আটক হয়েছেন। এটা আদালতের বিষয় তারা নির্দোষ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ছাড়া পাবেন।

তবে দেশে বর্তমান সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট দায়ী এ কথা তারানকোকে জানালে তাতে তিনিও একমত হন বলে জানান ড. মোমেন।

গণতান্ত্রিক দেশে একটি দায়িত্বশীল বিরোধী পক্ষ থাকা প্রয়োজন বলেই মনে করেন তারানকো তথা জাতিসংঘ।

শিগগিরই তারানকো বাংলাদেশে আসতে পারেন কি না? এমন প্রশ্নে জাতিসংঘ স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলানিউজকে জানান, তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো নেই। তিনি যেতে চাইলে মিশনকে অবশ্যই জানাবেন। এমন কিছু এখনো জানাননি।

সন্ত্রাস বন্ধ না করলে বর্তমান সরকার বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে কোনও ধরনের সংলাপ করবে না এমন কথাই তারানকোকে জানিয়েছেন ড. মোমেন।  

এদিকে বুধবার সকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের কাছে জাতিসংঘ মহাসচিবের চিঠির বিষয়টি জানিয়ে বলেছেন, এমন চিঠি এসেছে তবে সরকার কোনও সংলাপে যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময় ১৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।