ঢাকা: মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা হওয়া অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার চেয়েও হত্যা ও ধর্ষণে ভয়ঙ্কর ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। এমনকি নাজিদের চেয়েও নিষ্ঠুর ছিলেন কামারুজ্জামান।
বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
৫৭৭ পৃষ্ঠার রায়ের মূল অংশ লিখেছেন কামারুজ্জামানের আপিল মামলার বেঞ্চের বিচারক প্যানেলের প্রধান ও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা।
রায়ের ১৮২ পৃষ্ঠায় বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, সোহাগপুর (শেরপুর জেলা) গণহত্যাকাণ্ডে ওই গ্রামের সকল মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এ পরিকল্পনা ও অপারেশন করা হয় স্থানীয় সুরেন সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্প থেকে।
কামারুজ্জামান হত্যা ও ধর্ষণের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এই ঘটনা ছিলো অত্যন্ত নিষ্ঠুর, অমানবিক ও বর্বর। অপরাধ সংঘটনকারীরা কেবল পুরুষদেরকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয় নাই, তাদের হাত থেকে বিধবারাও রেহাই পাননি।
রায়ের ১৮৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়, ওই গ্রামের নারীরা অপরাধের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে পালিয়ে গিয়ে ২/৩ দিন পর ফিরে এসেছিলেন, তাদেরও নিস্তার মেলেনি।
বিচারপতি এস কে সিনহার মতে, এই কাজ কারো সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এমনকি নাজিরাও এ ধরনের নিষ্ঠুর কাজ করে নাই।
১৮৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়, আলবদর বাহিনী গঠন এবং পরে সোহাগপুর গ্রামে গণহত্যা ও বিধবাদের ধর্ষণে তার (কামারুজ্জামান) কার্যক্রম ছিলো অমানবিক ও বিভীষিকাময়। অপরাধ সংঘটনের এ ধরনের কারণে তিনি কোনো সহানুভূতি পেতে পারেন না। এই অপরাধ সংঘটনে আমরা একজন মানুষ ও একটি জানোয়ারের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না।
১৮৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়, আমরা এটা ভাবতেও পারি না, একজন বাঙালি হয়ে তিনি কিভাবে এ ধরনের ভয়াবহ অমানবিক কাজে যুক্ত হলেন। তিনি দণ্ডের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের কৃপামূলক বিবেচনা পেতে পারেন না। সর্বোচ্চ শাস্তিই এ অপরাধের যথাযথ ও উপযুক্ত সাজা।
রায়ে আরো বলা হয়, সোহাগপুর গ্রামের হত্যা ও ধর্ষণ আব্দুল কাদের মোল্লার হত্যা ও ধর্ষণের চেয়েও ভয়াবহ। এ কারণে এটাই সবচেয়ে যথাযথ মামলা যেখানে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র শাস্তি। এ সাজা দিয়ে ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচার করেছেন।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোট ৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগগুলোর মধ্যে সোহাগপুর গণহত্যার (৩ নম্বর) অভিযোগটিতে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের (৩:১) ভিত্তিতে ওই রায় বহাল রাখেন বিচারপতিরা। তাদের মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখলেও বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার (৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ অভিযোগে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইবুন্যাল।
অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন (২ নম্বর অভিযোগ) ও দারাসহ ছয় হত্যার (৭ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যথাক্রমে ১০ বছর ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
তবে মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান হত্যার (১ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দেন। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছিলেন কামারুজ্জামান।
এছাড়া ৫ নম্বর (১০ জনকে হত্যা) ও ৬ নম্বর অভিযোগে (টুনু হত্যা ও জাহাঙ্গীরকে নির্যাতন) আপিল মামলার রায়েও খালাস পেয়েছেন কামারুজ্জামান। ট্রাইব্যুনালও থেকেও এ দুই অভিযোগে খালাস দেওয়া হয়েছিলো তাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫