ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহে থানা মনিটরে আইপি ক্যামেরা

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫
ময়মনসিংহে থানা মনিটরে আইপি ক্যামেরা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধী সনাক্ত করতে ময়মনসিংহে থানা ও আদালত পুলিশের হাজতখানায় আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

থানার ভেতরের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, সেবার মান বাড়ানো, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং ও কাজে গতি আনতে সময় উপযোগী প্রযুক্তি আইপি ক্যামেরার অধীনে আনা হয়েছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন থানা ও আদালত পুলিশের হাজতখানা।



বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ থানাগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে আধুনিক এ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছে পুলিশ।

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ জানায়, সম্প্রতি প্রাথমিকভাবে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানায় চারটি, ভালুকা মডেল থানায় চারটি, আদালতের হাজতখানায় চারটি ও পুলিশ লাইনে আটটি আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত আগ্রহ ও ভাবনা-চিন্তা থেকে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক এসব ক্যামেরা স্থাপন করেছেন বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিটি থানায় ক্যামেরা স্থাপনে খরচ পড়েছে গড়ে দেড় লাখ টাকা। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মূল সার্ভার কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে পুরো ব্যবস্থা।

অত্যাধুনিক এ ব্যবস্থার মাধ্যমে যেকোন মুহূর্তে নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), দক্ষিণ ও উত্তরের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) দেখতে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট থানার ভেতর-বাইরের কার্যক্রম।

জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রচলিত সিসি ক্যামেরার (ক্লোজ সার্কিট) চেয়েও উন্নত এ ক্যামেরার মাধ্যমে থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোপনীয় ও সুরক্ষিত ইন্টারনেট প্রটোকল দিয়ে যেকোন জায়গা থেকে সরাসরি ভিডিও করা ও দেখানো যাবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন থানার তাৎক্ষণিক দৃশ্যপটও দেখা যাবে।

ওই সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের বড় বড় মার্কেটে এ বিশেষ ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জেলা পুলিশ। এতে করে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সহজেই অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

এ বিষয়টির গুরুত্ব স্বীকার করে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করে এর গুরুত্ব, সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরাও তাদের কার্যক্রম মনিটরিং এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্রুত আইপি ক্যামেরা লাগানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন, ইকরামুল হক।   

সিসি ক্যামেরার বদলে আইপি ক্যামেরার প্রবর্তন সম্পর্কে ময়মনসিংহ দক্ষিণের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) আবু আহাম্মদ আল মামুন বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় আধুনিকতা ও জবাবদিহিতার আওতায় এসেছে দুটি থানা, আদলত হাজত ও পুলিশ লাইন। এটি জেলা পুলিশ সুপারের বিশেষ উদ্যোগেই স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নিরাপত্তার দিককে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশের কাজে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা আনা ও অনৈতিক কাজ থেকে পুলিশ সদস্য বিরত রাখতেই এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব থানায় এ ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, আইপি ক্যামেরা নেটওয়ার্কের অধীনে আনার পর থেকেই এসব থানার চিরাচরিত দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আর থানায় নেই অনাবশ্যক ভীড় বা আড্ডা।

শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় গিয়ে দেখা গেল নিজের কক্ষে বসে অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল করিম। এরই ফাঁকে চোখ বুলিয়ে নিলেন টেবিলে থাকা কম্পিউটারের মনিটরে আবার নিজের মোবাইল ফোনে বিশেষ এ ক্যামেরার মাধ্যমে।

এর মাধ্যমে থানার সামনের রাস্তা থেকে থানার প্রধান ফটক, প্রধান ফটক থেকে বারান্দা, ডিউটি অফিসারের কক্ষ কাম ওয়েটিং রুম ও থানার হাজতখানা নজরদারী করছেন।

ওসি আবু মোহাম্মদ ফজলুল করিম জানান, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে থানায় সেবার মান, কর্মকর্তাদের মনিটরিং এবং নিরাপত্তা বাড়াতে বেশ কাজে দিচ্ছে।

থানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও এ ক্যামেরার সহায়তায় সনাক্ত করা সম্ভব। সরাসরি পর্যবেক্ষণের ফলে কর্মকর্তাদের মাঝে সেবার মানসিকতা বাড়ছে বলে জানান ফজলুল করিম।

ওসি বলেন, আগে হাজত-বারান্দায় লোক ঘুরাঘুরি করতো, ডিউটি অফিসারের কক্ষে ভীড় লেগেই থাকতো। এখন পরিবর্তন এসেছে। প্রতি মুহূর্তে মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রফুল্লতা দেখা দিয়েছে সেবা প্রত্যাশিদের মাঝেও।

অভিন্ন মত জানালেন ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ারও। তিনি বলেন, জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে পরিবেশ স্বচ্ছ রাখার স্বার্থেই থানাকে আইপি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
 
যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক বলেন, উন্নত বিশ্বে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৃতীয় চক্ষু হিসেবে এসব ক্যামেরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যমে সহজেই অপরাধীদের সনাক্ত করা ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।