ঢাকা: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও এ নিয়ে কোনো তৎপরতা নেই।
মমতা ব্যানার্জির আপত্তির মুখে চার বছর আগে আটকে গিয়েছিল তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি।
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে অফিসিয়াল কোন মিটিং নেই। তবে তার এ সফরে তিস্তা চুক্তি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করি।
তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা।
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলে মমতার না আসায় তা আর স্বাক্ষরিত হয়নি।
বরাবরই বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ইস্যুতে তিস্তা চুক্তির জন্য ভারত সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছে।
মমতার এ সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনো তৎপরতা নেই বলে বুধবার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব খিজির আহমেদ।
ভারত-বাংলাদেশের অমিমাংসিত নদী নিয়ে কাজ করে আসা যৌথ নদী কমিশনও মমতার সফরের সময় তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কোনো আলাপ-আলোচনার কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।
যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন বুধবার বাংলানিউজকে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে আসছেন।
তার সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো অফিসিয়াল মিটিং নেই।
বাংলাদেশ সফরকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মমতা।
ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় যোগদান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়োজিত চা-চক্রে অংশ নেওয়ারও কথা রয়েছে তার।
ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি প্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন মমতা। এছাড়াও বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন, স্থল সীমান্ত চুক্তি, ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকদের মমতা ব্যানার্জি জানান, তার এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি (মমতা) নিজে এ বিষয়ে আলোচনা তুললে সমস্যা সমাধানে আরও সহজ হবে।
নদী কমিশনের সঙ্গে কোনো সভা নেই বলে জানান কমিশনের এই সদস্য।
তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয় জানিয়ে পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বাংলানিউজকে বলেন, তার (মমতা) সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ বিষয়ে আলাপ হতে পারে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, তিস্তার বিষয়ে মমতা ব্যানার্জি তার মতামত আগেই দিয়েছেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি মোটেই আগ্রহী নন।
তবে স্থল সীমানা চুক্তি বিষয়ে এই মুহূর্তে তার বিশেষ কোন আপত্তি জানানোর সুযোগ নেই। কারণ বিষয়টি এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ভারতীয় লোকসভার হাতে।
এই কূটনীতিক আরও বলেন, ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
তাদের সঙ্গে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদীর আছে। একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতেই ত্রাহি অবস্থা হলে বাকিগুলো চুক্তি করতে শতাব্দি চলে যাবে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের সহযোগিতা নেবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ভারত আমাদের উল্লেখযোগ্য বন্ধু। তারা তিস্তা চুক্তি করতে পারবে না সেটা কখনই বলেনি। তারা চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে। তাই এখনই আইনগতভাবে তিস্তার বিষয়টি নিয়ে এগুনোর কথা ভাবছে না বাংলাদেশ।
এদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে তারা তৎপর রয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ভারত সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ সফরটির ফলে দুই দেশের অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো এক নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা করছে ঢাকা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশ সফরের আশা প্রকাশ করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণে একটি সুন্দর মুহূর্তকে উপলক্ষ্য করে তিনি ঢাকা এসেছেন। মমতা ব্যানার্জি এ সফরে বেশ কিছু সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তবে বৈঠকগুলো কোনো আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নয়। আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক না হলেও এসব বৈঠকের গুরুত্ব রয়েছে।
সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দ্রুত নিরসনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীর কাছে পুন:ব্যক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানে পশ্চিমবঙ্গের করণীয় বিষয়গুলোতে সহযোগিতাও চাওয়া হবে। আর ভারতের রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের যে সহযোগিতা প্রয়োজন তা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা হবে।
তিনি বলেন, আশা করছি, এ সফরের মধ্য দিয়ে আমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধান সহজতর হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫/আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
** ঢাকার এজেন্ডায় তিস্তা, মমতার ইলিশ
** অনেক আন্তরিকতা নিয়ে এসেছি