হোটেল সোনারগাঁও থেকে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বলেছেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন। ভরসা রাখুন।
শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে ‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডায় মমতা ব্যানার্জি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেকের মনে প্রশ্ন আছে তিস্তা নিয়ে। আমার ওপর আস্থা রাখুন। ভরসা রাখুন। আমাদের কিছু সমস্যা আছে। আপনাদেরও কিছু সমস্যা আছে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি আগামীকাল (শনিবার) হাসিনা দি’র (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করব। আমি নিশ্চিত এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
মমতা বলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে এই বৈঠকে খুব ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। টিভি চ্যানেল নিয়ে একটি দাবি আছে। আমাদের দিক থেকে কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের (ভারত) এখানে চাইলে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো ব্যবসায়িকভাবে আসতে পারে। আপনারা বেশি বেশি করে আসুন।
তিনি আরও বলেন, শুধু তিস্তা কেন- পদ্মা, মেঘনা, গঙ্গা নদী সবই আমাদের সবার। কেউ ভাগাভাগি করতে চাইলেও তা হবে না।
২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দুইদিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সেসময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তার সফরসঙ্গী হওয়ার কথা ছিল। ওই সফরে ট্রানজিট, তিস্তার পানিবণ্টন, সমুদ্রসীমা, মাইগ্রেশন, ছিটমহল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং চুক্তিও স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অজানা কারণে মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে সঙ্গী হননি মমতা।
সেই সময় মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে না আসার ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, সেবার আসতে গিয়ে ফিরে গিয়েছি। এবারও অনেক বাধা ছিল। ব্যাগ গোছানোর আগ পর্যন্ত বুঝতে পারছিলাম না আসতে পারব কি না। চিন্তা ছিল। কিন্তু সব বাধা ভেঙে যেহেতু এসেছি, তখন সব বাধা ঘুচে যাবে।
এ সময় তিনি বলেন, দুই দেশের সমস্ত বাধা দূর হবে। দিস ইজ এ নিউ বিগিনিং (This is a new begining)। এটি একটি নতুন শুরু। সাংস্কৃতিক বন্ধনের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বড় জায়গায় যাবে।
মমতা কলকাতার রাজারহাটে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি ভবন করার জন্য জমি দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি চান সেখানে বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধুর নামে একটি ভবন করুক। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকবে।
তিনি বলেন, দুই দেশের সিনেমা শিল্প নিয়ে অনেক জট রয়েছে। আমি সেগুলো খোলার চেষ্টা করছি।
এই জট খুলেতে তিনি বাংলাদেশ থেকে তিনজন ও ভারত থেকে তিনজন নিয়ে একটি কমিটি করার প্রস্তাব দেন। কমিটির চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে করার প্রস্তাব করেন মমতা।
তিনি বলেন, আসাদতুজ্জামান নূর বাংলাদেশের তিনজন প্রতিনিধি ঠিক করবেন। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিনিধি হলেন চলচিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টপাধ্যায় ও শ্রীকান্ত মোহতা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস’র কর্ণধার শ্রী শ্রীকান্ত মোহতা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব করুক। বাংলাদেশে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব করুক।
তিনি তার লেখা ৫৩টি বইসহ বাংলাদেশ বইমেলা কর্তৃপক্ষকে মোট ৫০০টি বই উপহার দেবেন বলেও জানান।
এছাড়া, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে বিমানবন্দরের নামকরণ ও একটি ফেলোশিপ চালু করবেন বলে জানান মমতা। পাশাপাশি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি চেয়ার করারও ঘোষণা দেন তিনি। আর এটি উদ্বোধন করতে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাবেন বলেও জানান।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, আমি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কাঠবিড়াল হয়ে সেতুবন্ধনের কাজ করে যাবো। অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করা হয়েছে। অনেক কিছু ঘটানো হয়, অনেক কিছু ঘটে। আমরা ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট (স্থল সীমানা চুক্তি) সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। ভারত সরকার বিল আনছে। বড় কাজ হয়ে যাবে। আমরা সংস্কৃতি বিনিময় করছি। ব্যবসা সম্প্রসারণে যা যা করা দরকার তা আমরা করব।
মমতা বাংলাদেশের মানুষের প্রশংসা করে বলেন, আপনাদের আতিথেয়তা ভুলবার নয়।
‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডায় সপ্রতিভ মমতা দুই বাংলার শিল্পীদের কাছ থেকে গান শুনতে চান। এসময় তিনি বাংলাদেশের সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, আলমগীর, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদী মোহাম্মদ, ভারতীয় শিল্পী প্রসেনজিৎ, দেব, মুনমুন সেন, নচিকেতা, চিত্রনির্মাতা গৌতম ঘোষসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত এবং আলতাফ মাহমুদের সুর করা ২১ ফেব্রুয়ারির গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ গেয়ে ওঠেন।
এরপর সবাইকে তিনি দুই দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ার আহ্বান জানান। প্রথমে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও পরে ভারতীয় জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে ‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডা শেষ হয়।
এরপর বিকেল চারটার দিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পাঁচটার দিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন মমতা ব্যানার্জি।
তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য দেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫/আপডেট ২১৫১ ঘণ্টা
** বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আবেগাপ্লুত, মুক্তি আন্দোলনের বাড়ি
** কলকাতায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধা ভবন গড়ে তোলা হবে
** দুই বাংলার মানুষের মনের কোনো বাউন্ডারি নাই
** বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে মমতা