ঢাকা: পৃথিবীতে প্রচলিত ভাষা রয়েছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। সব ভাষার শব্দ, বর্ণ, উচ্চারণ ভিন্ন ভিন্ন।
সে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। এখানে রয়েছে একটি ভাষা জাদুঘর। কিন্তু প্রচার-প্রচারণার দৈনতায় সেটি রয়ে গেছে অধিকাংশের অগোচরে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির পাশে ২০০১ সালে ১৫ মার্চে ১ দশমিক ০৩ একর জায়গায় গড়ে উঠে আন্তর্জতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। পরে ২০১০ সালে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হলে এই জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়।
এই ভাষা জাদুঘরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা স্থান পেয়েছে। ভাষা জাদুঘরে পা রাখতেই আপনি পরিচিত হতে থাকবেন পৃথিবীর জানা অজানা অনেক ভাষার সঙ্গে।
ভাষা জাদুঘরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় ভাষার নিদর্শন ও অনেক দেশের ভাষা আন্দোলনের আনুষঙ্গিক তথ্য সংরক্ষেণের ব্যবস্থা আছে। পর্যায়ক্রমে তা আরও বাড়ানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
আলাপ-চারিতায় আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, আমাদের এই ইনস্টিটিউ যেহেতু আন্তজার্তিক মানের তাই আমারা ইউএনস্কোর পরামার্শ অনুযায়ী এগিয়ে চলছি, আমাদের সব সংরক্ষণকে আরও সমৃদ্ধ করতেও পরিকল্প রয়েছে।
তিনি জানান, এখানে যখন কোনো দর্শনার্থী এলে বিভিন্ন দেশের ভাষার বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি বেড়ে যাবে। বিলুপ্তপ্রায় অনেক ভাষাকে এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
মঞ্জুরুল হক বলেন, অনেকেই এসব ভাষা সম্পর্কে জানেন না। একটি দেশের ভাষা যখন হারিয়ে যায়, সেই সঙ্গে সে দেশের সংস্কৃতির চিহ্নও হারিয়ে যায়।
‘আমারা জাদুঘরে ওই ভাষাটি তুলে ধরার পাশাপাশি সে ভাষা বা সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি’—যোগ করেন তিনি।
জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, পৃথিবীতে প্রায় সাত হাজার ভাষা রয়েছে। এরমধ্যে প্রচলিত আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি। ৯০ শতাংশ ভাষায় এক লাখের কম লোক কথা বলে।
জাদুঘরের তথ্য অনুযায়ী, অধুনা বিশ্বেও বহু ভাষাই প্রায় বিপন্ন। কয়েক হাজার ভাষা এরইমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভাষা আগামী এক বা দুই প্রজন্মের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে!
জাদুঘরে বিশ্বের ৪৪টির বেশি দেশের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, ছবিসহ বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ, ভাষা আন্দোলেনের শহীদদের নাম ও ছবি, বিভিন্ন সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরির অ্যালবাম এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাচীন বর্ণমালার পরিচিতি রয়েছে।
সেই সঙ্গে জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে বাংলাসহ বিভিন্ন দেশের ভাষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ছবি।
বর্তমানে তিনতলা ভবন বিশিষ্ট আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে পর্যায়ক্রমে ১২ তলায় উন্নীত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভবনের কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ইনস্টিটিউটে উন্নতমানের ডিজিটাল গ্রন্থাগার, ভাষা গবেষণাগার, ভাষা আর্কাইভস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ডরমেটরি ও ভাষা ল্যাব স্টুডিও গড়ে তোলা হবে।
ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, এখানে দেশের এবং দেশের বাইরের ভাষা নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করবেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র দেওয়া হবে।
এখানে ফরেন ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং সেন্টার (এফএলটিসি) নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
তবে ইনস্টিটিউটের অনেক কর্মকাণ্ডই জনবল সংকটের কারণে থমকে আছে। যোগ্য জনবলের অভাব পূরণ হলে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫