ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাত্তা দেন না ওয়াসা এমডি তাকসিম

অব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছে রাজধানীবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫
অব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছে রাজধানীবাসী তাকসিম এ খান

ঢাকা: খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাত্তা না দিয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান নিজের মনগড়াভাবে চলছেন। তার অব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীবাসী নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এমনকি তাকসিমের দায়িত্ব অবহেলার জন্য মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ওয়াসার কোনো কাজেই গতি নেই। সব জায়গাতেই অবহেলা।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় পানি সরবরাহের প্রধান পাইপ ছয় মাস আগে ফেটে দেদার পানি বের হলেও তা বন্ধের উদ্যোগ নেয়নি ওয়াসা। ফলে
পাইপের পানি আশপাশে জমে সাধারণ জনগণের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করছে। যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের একটি র‌্যামও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। তারও কোনো খোঁজ নেননি তাকসিম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, হানিফ ফ্লাইওভারের পক্ষ থেকে বিষয়টি একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এমডির স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তা সমাধান করা যাচ্ছে না। তিনি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশকেও পাত্তা দেন না।

ওই প্রকৌশলী জানান, ওয়াসার শীর্ষস্থানীয় একটি পদে এক প্রকৌশলীকে নিয়োগের জন্য এমডি তাকসিম এ খানকে গণভবনে ডেকে নিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই নির্দেশনা পাত্তা না দিয়ে জামায়াতপন্থী এক প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেন তিনি।

ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, এমডি তাকসিম এ খান ওয়াসায় আসার পর দিন দিন অনেক টাকা দেনা হয়ে যাচ্ছে। এর আগে লাভজনক ছিল ওয়াসা। তিনি আসার পর বিদেশি ঋণ ও অনুদান নিয়ে যেসব প্রকল্প হয়েছে তার প্রায় সবই ব্যর্থ হতে বসেছে। এমনকি এমডি ওয়াসার অনেক প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে ওয়াসা এমডির অবহেলার কারণেই গত ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুরে রেল কলোনিতে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে চার বছরের শিশু জিহাদের করুণ মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওয়াসার অব্যবস্থাপনাই ফুটে ওঠেছে।  

নগরবাসীর জন্য স্বল্পমূল্যে সুপেয় পানি নিশ্চিত করার কথা বলে একের পর এক প্রকল্প হাতে নিয়ে ব্যয় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ কোনো কিছুতেই নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। এখনও গ্রীষ্মের তাপদাহ শুরু হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে রাজধানীতে পানি সংকট চলছে। এ সমস্যা সমাধানেও কোনো উদ্যোগ নেই ওয়াসার। বরং পানি সরবরাহের নামে বাণিজ্য শুরু করছে সংস্থাটি। ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ওয়াসা এমডি তাকসিমের নেতৃত্বে থাকা সিন্ডিকেট। শীতের মৌসুমে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা, অলিগলির পথ কেটে ওয়াসা স্যুয়ারেজ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে যেসব কাজ করা হয়েছে সেগুলোও কোনো কাজে আসছে না।

ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতেও রাজধানীর বহু এলাকা জলমগ্ন ও বিপজ্জনক কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। সামান্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও দেখতে পাচ্ছেন না নগরবাসী।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, মিরপুর, শ্যামলী, আজিমপুর, গোড়ানসহ বেশকিছু এলাকায় চরম পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

লাইনে পানি সরবরাহ কম থাকায় বাসাবাড়িতে পানির অভাবে গোসল-খাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। নগরজুড়ে পানিস্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু ও অতিলোভী কর্মকর্তা-কর্মচারী ওয়াসার পানি ব্যবসায় নেমে গেছেন। ওয়াসার বড় এক গাড়ি পানির মূল্য যেখানে ৬০০ টাকা, সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া যায় রাজধানীর সূত্রাপুর, উত্তরা ও মগবাজার এলাকায়। অন্যদিকে পানি সঙ্কটের কারণে নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগের আধিক্য বেড়েছে অনেক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার প্রতিদিন উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৪২ কোটি লিটার। উৎপাদন হচ্ছে ২২৮ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। বর্তমানে নগরীর চাহিদাও ২৩০ কোটি লিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

৬৭০টি পাম্পের মধ্যে সাতটি অকেজো হয়ে আছে। যে কারণে কিছু এলাকার শেষ বাড়িগুলোয় পানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খানের গাফিলতির চরম উদাহরণ হয়ে আছে সায়েদাবাদ এলাকা।

হানিফ ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক আশিকুর রহমান জানান, পাইপলাইন ফুটো হয়ে মাসের পর মাস পানি বের হতে থাকায় ফ্লাইওভারের র‌্যামে ৪ ফুট বাই ৪ ফুট আয়তনের তিনটি পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ওই র‌্যাম দিয়ে যানবাহনগুলো ঠিকমতো ওঠানামা করতে পারছে না। ফ্লাইওভারের ওই র‌্যামটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।

হানিফ ফ্লাইওভারের ওই পয়েন্ট দিয়ে ওঠার মুহূর্তেই পাইপলাইন দিয়ে গলগল করে পানি বের হতে দেখা গেছে। ফাটল পাইপলাইনের পয়েন্টে গোলাকৃতির চাড়ি দিয়ে রাখা হয়েছে। সেই চাড়ির ফুটো দিয়ে ছুটে পড়া পানিতে রাস্তা প্লাবিত। এরই ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় ফ্লাইওভারের ওঠানামার দুই পাশের রাস্তা ভেঙে পড়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সময় : ০৮১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।