পাটুরিয়া ঘাট থেকে: দাদি পাগল মারুফা দাদির কাছেই থাকতে চায়। কিন্তু সময়ের বাস্তবতায় দাদির কাছে থাকা হয়ে উঠে না মারুফার।
তবে, ক’দিন ধরে মন মানছিল না বলে ফুফা আব্দুল হান্নানের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি দাদিকে দেখতে যাচ্ছিল মারুফা আক্তার (৪)। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত প্রিয় দাদিকে আর দেখা হলো না তার।
বোরবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে ১২টার সময় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে একটি সিমেন্টবোঝাই কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যায় যাত্রীবোঝাই লঞ্চ এমভি মোস্তফা-৩। লঞ্চটিতে থাকা মারুফা ফুফার কোল থেকে ছিটকে পড়ে মাঝনদীতে। দুর্ঘটনায় ফুফা হান্নান বাঁচতে পারলেও আর খোঁজ মেলেনি মারুফার।
সংবাদ পেয়ে পাটুরিয়া ঘাটে ছুটে আসেন বাবা নাজমুল বিশ্বাস, মা পারভীন ও স্বজনরা। জীবিত নয়, এখন প্রিয় সন্তানের লাশের অপেক্ষায় পাটুরিয়া ঘাট নদীর তীরে আছেন মারুফার বাবা ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলা দলিলপুর গ্রামের নাজমুল ও ফুফা হান্নান শেখসহ পরিবারের স্বজনরা।
বাবা নাজমুল ও মা পারভীন এখনও জানেন না- তার প্রিয় সন্তানকে ফিরে পাবেন কিনা। সেটা জীবিতই হোক আর মৃতই হোক।
মারুফার ফুফা হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘লঞ্চে বসে ছিলাম। কিন্ত কখন কী হলো বুঝি নাই। মারুফা আমার কোলে ছিল, কখন আমার কোল থেকে ছিটকে পড়ে গেল বুঝে উঠতে পারি নাই। ’
মেয়ের জন্য পাগলপ্রায় মারুফার মা পারভীন রোনাজারি করে উঠে বলেন, ‘সকালে মারুফা বলে আমাকে তাড়াতাড়ি নতুন জামা-কাপড় পরিয়ে দাও, আমি দাদির কাছে যাবো। আমার মেয়ে এখন কোথায় গেল রে!’
এসব বলতে বলতেই মেয়ের শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে যান পারভীন। বারবার কেবল মারুফার নাম ধরে মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন।
রোববার দুপুরে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত পৌনে ৩টার দিকে সেটি উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ৬৭ যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন- ২৩ নারী, ১৫ শিশু ও ২৯ জন পুরুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫