ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধ মধুমতি মডেল টাউনে গড়ে উঠছে বাড়ি

নূরনবী সিদ্দিক সুইন, বিজনেস এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫
অবৈধ মধুমতি মডেল টাউনে গড়ে উঠছে বাড়ি

ঢাকা: উচ্চ আদালত থেকে অবৈধ ঘোষিত সাভারের আমিনপুর এলাকার মধুমতি মডেল টাউনে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক ভবন। আদালতের রায় অনুযায়ী প্রকল্পের ভরাট করা মাটি অপসারণ করে ৬ মাসের মধ্যে যেখানে জলাভূমিগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কথা ছিল সেখানে এখন চলছে ৫০টির ও বেশী বাড়ির কাজ।

কয়েকটিতে বাড়িতে মানুষ বসবাস শুরু করেছে এবং কয়েকটি বাড়ির নির্মাণকাজও শেষের পথে।

মডেল টাউনের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের সঙ্গে যোগসাজশে মধুমতি মডেল টাউন ঐক্য পরিষদ নেতারা ও কয়েকজন প্লট মালিক এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় আপডেট তথ্যও দিচ্ছেন তারা। গত ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই পেজে বলা হয়, ৩৬টি বাড়ির কাজ চলছে। সঙ্গে নির্মাণাধীন সুন্দর একটি বাড়ির ছবি। একইভাবে একই সালের ৯ মার্চ জানানো হয় ৪৪টি বাড়ির কাজ চলার কথা।

কিসের ভিত্তিতে আপনারা অবৈধ প্রকল্পে বাড়ি করছেন এমন প্রশ্নে ঐক্য পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মনির হোসেন মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ৪টি রিভিউ আবেদন করে রেখেছি। আর ওই সুযোগে প্লট গ্রহীতাদের বাড়ি করতে বলা হয়েছে। এরইমধ্যে প্রায় ৬০টি বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ঐক্য পরিষদ আপাতত ১ লাখ টাকা করে নিচ্ছি। বেশ কয়েকটিতে মানুষজন বসবাসও করছেন।

মূল প্রতিষ্ঠান মেট্রো মেকার্স কী আপনাদের সহযোগিতা করছে এমন প্রশ্রে তিনি বলেন, তারা তো আমাদের প্লট হস্তান্তর করেছেনই। তারা অবগত আছেন।

রিভিউ আবেদনের শুনানি কবে, কিংবা ওই আবেদনের ফল কি আপনাদের পক্ষে আসবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা শুধু আবেদনই করে রেখেছি। কারণ শুনানি করতে গেলে আদালত হয়তো কমিশন গঠন করবে, তারা আবার এসে দেখবে এখানে কোনো বাড়ি নেই। এতে করে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তার চেয়ে বরং বাড়িগুলো নির্মাণ হয়ে যাক, পরে উদ্যোগ নেওয়া যাবে।

বাড়ি (প্লট-৭, রোড-১, ব্লক-০বি, মেট্রো ভিউ)করেছেন জেএম মনির হোসেন। তার অবশ্য দাবি এসব তো টেম্পোরারি বাড়ি। এসব বাড়ি করতে তো রাজউকের অনুমোদনের দরকার নাই। সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে ৪টি রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। সে হিসেবে বাড়ি তো করা যেতেই পারে। আমরা রিভিউ আবেদনে ৬০টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছি। আমরা যখন প্লট কিনেছি তখন থেকে সরকারি হিসেবে ১৬গুণ জমির দাম বেড়েছে, আমাদের দ্বিগুণ দাম ফেরত দিতে বলা হয়েছে। তাও আদালতকে বলেছি আমরা।

ঐক্য পরিষদের সচিব শাহনেওয়াজ খানের কথায় উঠে আসে আরেক চিত্র। তার কথাবার্তায় উঠে আসে যে মেট্রো মেকার্স প্লট গ্রহীতাদের দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা, তারা বরং ডেভেলপমেন্ট কাজের জন্য উল্টো বিভিন্ন চার্জ নিচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ১৫জন রিভিউ করেছি, তা উচ্চ আদালত আমলেও নিয়েছেন। আরও কয়েকটা আবেদন আছে। বাড়ি আমি নিজে করিনি। অন্যদের বাড়ি করার বিষয়টি অবগত নই। হয়তো নিজের মতো তারা করছে।

এ বিষয়ে বেলার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি অবৈধ প্রকল্পে আইনত বাড়ি বানানোর কোনো সুযোগ নেই। রাজউকই বা কীভাবে অনুমোদন দেয়। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ওই জমিতো সরকারের কাছে ফেরত দেওয়ার কথা। আর প্লট গ্রহীতাদের আদেশ অনুযায়ী টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। বাড়ি বানানো হলে তা আদালত অবমাননা। আদালত অবমাননার মামলা হবে।

যারা বাড়ি করছেন তারা বলছেন রিভিউ আবেদন করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা রিভিউ করেছেন তারা তো কোনো প্রতিকার পায়নি। চূড়ান্ত রায় তো স্থগিত হয়নি। আগের রায়ই বহাল। তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব। যাই হোক আমরা তো ছেড়ে দিচ্ছিনা। এর শেষ দেখবো।

এর আগে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির বেঞ্চ ২০১২ সালের সাত আগস্ট মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৩ সালের ১২ জূলাই ওই রায়ের পুরোটা প্রকাশিত হয়। রায়ে প্রকল্পটিকে অবৈধ উল্লেখসহ প্লট ক্রেতাদের দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা ফেরত দিতে মধুমতি মডেল টাউন আবাসিক প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডসহ পক্ষগুলোর পৃথক পাঁচটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেয়া হয়।

রায়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সাভারের বিলামালিয়া ও বৈলারপুর মৌজা এলাকায় অবস্থিত প্রকল্পের জায়গা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভরাট করা মাটি অপসারণ করে ৬ মাসের মধ্যে জলাভূমিগুলোকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে আবাসন কোম্পানি মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডকে।

রায়ে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই আবাসন কোম্পানি মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড আমিন বাজার এলাকায় মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প নামে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

গত ২০০৩ সালে সাভারের আমিন বাজারে মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রকল্পের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বেলা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে ২০০৪ সালে। প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত রুল জারির পাশাপাশি প্রকল্পের কাজে স্থগিতাদেশ দেন।

২০০৫ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্টের রায়ে ওই প্রকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে বন্যাপ্রবাহ এলাকাকে সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড ও বেলাসহ অন্যরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। এসব আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আপিল বিভাগ প্রথমে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।